বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের চিন্তাচেতনা দিন দিন বদলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মানুষ অনেক বেশি মানবিক হওয়ার চেষ্টা করছে বা মানবিক হয়ে উঠছে, এর প্রকাশও নানাভাবে ঘটাচ্ছে। কিন্তু এখনো কিছু মানুষ মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তারা এখনো নারীকে মনে করে ভোগ্য পণ্য এবং কোনো অনাচারের বিরুদ্ধেই নারী মুখ খুলতে পারবে না- এটিই তাদের বদ্ধমূল ধারণা। অন্তত ফেনীর সোনাগাজীতে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। নইলে প্রকাশ্য দিবালোকে পরীক্ষার কেন্দ্রের ভেতরে শিক্ষার্থীর শরীরে কীভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়া সম্ভব? এর আগে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ শ্লীলতাহানি করেন- এমন অভিযোগ তুলে ঘটনার শিকার শিক্ষার্থী ২৭ মার্চ মামলা করেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার জের ধরেই অধ্যক্ষের সমর্থক গোষ্ঠী এই অপকর্ম করেছে। কতটা দুঃসাহস থাকলে মাদরাসার অভ্যন্তরে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ডেকে নিয়ে এ ধরনের অপকাণ্ড ঘটানো সম্ভব হতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে। নারী ও শিশু নির্যাতনসহ, বলাৎকার এমনকি মাদক বহন করার মতো অপকাণ্ডও তারা করছেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় গ্যাস সিলিন্ডারের ভেতরে ইয়াবাসহ একজন মুসল্লিকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া প্রায়ই মাদরাসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহারের অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হতেও দেখা গেছে। শিক্ষকদের নির্যাতনে কয়েক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরকে শারীরিকভাবে আঘাত করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া ইসলাম ধর্মেও শিশু-কিশোরকে এভাবে নির্যাতন করার কোনো এখতিয়ার রাখা হয়নি। অথচ কতিপয় মাদরাসা শিক্ষক এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করেই যাচ্ছেন। তারা কোন জগতে এবং কেমন বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বসবাস করেন তা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়।
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মানবকণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, আটকের পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তি দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। একজন নারীর শ্লীলতাহানির পর অপরাধীর মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন বা বিক্ষোভ প্রকাশ করা এরাইবা কারা? শিক্ষার্থীর শরীরে যারা আগুন লাগিয়েছে তারা সবাই বোরখা পরিহিত ছিল এবং একজন নারী কণ্ঠে কথা বললেও বাকি তিনজন কথা বলেনি। এতে অনুমান করা যায় অন্যরা বোরখা পরলেও নারীই ছিলেন এমনটি না-ও হতে পারে। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। অপরাধী যে বা যারাই হোক তাদের কঠোর আইনি শাস্তিই পারে এ ধরনের অপরাধ প্রতিহত করতে। মাদরাসার শিক্ষক হয়েও যারা নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না তাদের শাস্তি হওয়াটাই জরুরি। কারণ গুটিকয়েকের অপকাণ্ডে পুরো মাদরাসা শিক্ষক সমাজ এর দায় নিতে পারে না।