শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন
বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের অগ্রগতির বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অবহিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মহামান্য আদালত মন্তব্য করেছেন, সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড একদিনে তৈরি হয়নি; তাকে কেউ না কেউ লালন–পালন করে সন্ত্রাসী বানিয়েছে।
এছাড়া আদালত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে বলেছেন। উল্লেখ্য, ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে।
তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিন বিকালে তিনি মারা যান। পরে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
নয়ন বন্ড সম্পর্কে আদালতের মন্তব্য যথার্থ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একইসঙ্গে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া আদালতের নির্দেশনাও গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি আমরা।
কারণ কথিত ‘ক্রয়ফায়ারে’ যারা মারা যান, তারা মূলত আমাদের সামনে একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে যান, যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন আদালত।
বস্তুত ‘ক্রসফায়ারে’ যখন কোনো অপরাধী নিহত হয়, তখন তার অপরাধী হয়ে ওঠার নেপথ্য কুশীলবদের ভূমিকা বা পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি কালো চাদরে ঢাকা পড়ে যায় এবং এসব কুশীলব অধরাই থেকে যান। অপরাধের নেপথ্য কুশীলব তথা গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন বলেই সমাজে অপরাধের মাত্রা না কমে বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একজন অপরাধীর জন্ম হচ্ছে যে আঁতুড়ঘরে; তার রক্ষণাবেক্ষণকারী হচ্ছেন গডফাদাররা, এ কথা বলাই বাহুল্য। কাজেই সমাজ থেকে অপরাধের ‘বিষবৃক্ষ’ সমূলে উপড়ে ফেলতে হলে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি গডফাদারদের পরিচয় উদ্ঘাটন ও তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির পেছনে সাধারণত চারটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করা হয়।
এগুলো হল, ক্রাইম ম্যাপিং হট স্পট চিহ্নিত না করা, খুনি বা অপরাধীকে ভয় দেখানোয় ব্যর্থতা, দুর্বল মামলা ও তদন্ত রিপোর্ট এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব।
অবশ্য এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবে শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি। নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধ কমাতে হলে প্রথমে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
অপরাধের ঘটনা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে মূল অপরাধীকে চিহ্নিত করে তাকে এবং তার পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা গেলে, বিশেষ করে নৃশংস ও বীভৎস হত্যাকাণ্ডসহ সামাজিক অপরাধগুলো কমে আসবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।