সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ॥ ঠাকুরগাঁওয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ছেলের বাড়িতে মেয়ের অবস্থান এ যেন এক অপসংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। আর এর সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ। বলির পাঠা হচ্ছেন স্কুল কলেজ পড়–য়া ছেলে-মেয়ে ও তাদের নিরীহ পরিবার গুলো। এতে ফয়দা নিচ্ছেন এক শ্রেণীর কিছু অসাধু ইউপি প্রতিনিধি, স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি ও কিছু দলীয় ক্যাডার বাহিনী।
স্থানীয়রা জানা যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের শহিদুল ইসলামের এসএসসি পাশ পড়–য়া নাবালিকা কন্যার সাথে দেড় বৎসরের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে জগন্নাথপুর বিহারীপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে লাবু হোসেনের সাথে। লাবু হোসেন শহরের শান্তিনগর মহল্লায় একটি চানাচুর ফ্যাক্টরিতে সেলস্ ম্যানের কাজ করেন। বিষয়টি জানা জানি হলে লাবু হোসেন ফোন বন্ধ রাখে। পরে মেয়েটি ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে অবশেষে ছেলের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেয়। গত ৫ নভেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ি ছেলের বয়স ১৬ বছর ১১ মাস এবং মেয়ের বয়স ১৭ বছর। বিষয়টি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন অবগত হলে তিনি দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণকে দিক নির্দেশনা দেন যেহেতু ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই নাবালক সেক্ষেত্রে এখনই তাদের বিয়ে না দিয়ে সাবালক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার করা পরামর্শ দেন যা স্থানীয় ভাবে বসে বিষয়টি মিমাংসার পরামর্শ দেন।
কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য তামান্না বেগম, জামাল উদ্দীন, স্থানীয় মাতবর নজরুল ইসলামসহ ছেলের বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসীদের চাপের মুখে যৌতুক নিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিয়ের ঘোষনা দিলেন।
মানবাধিকার কর্মী মৌসুমী রহমান জানায় সমাজে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, বহু বিবাহ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বাল্য বিয়ে। এক্ষেত্রে সন্তানদের প্রতি অভিভাবদের উদাসিনতাও অনেকটা দায়ি। এছাড়া দায়ি আছে অপসংস্কৃতি। ধনী ইউক কিংবা দরিদ্র হউক কিংবা শ্রমিক হউক। সমাজে প্রচলিত হয়ে গেছে ছেলে-মেয়েকে স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনে দিতে হবে। তা না হলে ছেলে-মেয়ে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এমনি বাবা-মায়ের সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছে। একই কথা বলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীক। তিনি আরো বলেন সমাজে এখন প্রচলন হয়ে গেছে ছেলে মেয়ের সাথে একটু কথা বলা, যোগাযোগা রক্ষা করা, স্বাক্ষাত করা হলেই অভিভাবকের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে মেয়েকে ছেলের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া। আর এতে উৎসাহিত করছে সরকার দলীয় কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী।
মেয়ের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন মেয়ে আমাদের মুখে চুনকালি দিয়েছে। তাকে আর বাড়িতে ঢুকাবো না। অপর দিয়ে ছেলের মা লাভলি বেগম বলেন বিয়েটা হচ্ছে ভবিষ্যের জন্য ছেলের বয়স চলছে ১৬ বছর ১১ মাস এই বয়সে বিয়ে দিলে তাদের জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন কাজী, পুরোহীত, ঈমাম এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া আছে বাল্যবিয়ে দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলে দেব প্রয়োজনিয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য।