শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

আপডেট
*** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***                     *** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***

এবার চরের বালুতে ভাগ্য বদল করা ‘গোবিন্দগঞ্জে মিষ্টিআলু’ চাষ থমকে গেছে চারার অভাবে

এবার চরের বালুতে ভাগ্য বদল করা ‘গোবিন্দগঞ্জে মিষ্টিআলু’ চাষ থমকে গেছে চারার অভাবে

 

গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি(গাইবান্ধা) : মিষ্টি আলু গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শাকালু বা শ্যাখা আলু নামে পরিচিত কন্দল জাতীয় এ ফসলটির উত্তরাঞ্চলের প্রধান উৎপাদন এলাকাতেই এবার সিংহভাগ জমিই চারার অভাবে অনাবাদী রয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের শেষ বন্যায় আলু বীজের অধিকাংশ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে ‘গাইবান্ধার আলু’ হিসেবে পরিচিত এর প্রধান উৎপাদন অঞ্চল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের আলুচাষীরা বছরের একমাত্র ফসল এই মিষ্টি আলু চাষ করতে না পেরে চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একসময় এই আলু মঙ্গাপীড়িত উত্তরাঞ্চলে চৈত্র-বৈশাখের অভাবের সময় ভাতের বিকল্প হিসেবে মিষ্টিআলু খেতে বাধ্য হতেন এ এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ। কিন্তু এখন আর অভাবের জন্য নয়, বরং শখ এবং স্বাদের জন্য এ আলু খান এখানকার লোকজন। পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত এ মিষ্টি আলুর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাঙ্গালী নদীর তীরবর্তী মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পুনতাইড় গ্রামের চরপাড়া, বালুয়া, বোচাদহ, গুজিয়া, বিশপুকুর, পারসোনাইডাঙ্গা, তালুকসোনাইডাঙ্গা, শালমারা গ্রামে ব্যাপকভাবে আলুর চাষ শুরু করেন চাষীরা। নদীর চরের যে সব জমিতে তেমন কোন ফসল উৎপাদন করা যেতোনা, সে সব জমিতে নির্ভরযোগ্য ফসল হিসেবে এই মিষ্টি আলু চাষ করা যায়। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এখানকার প্রান্তিক চাষীরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েন মিষ্টিআলু চাষে। প্রতি বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জমিতে মিষ্টি আলুর চারালতা রোপণ করতে হয়। চাষীরা জানিয়েছেন, গত বছর বাঙ্গালী নদী তীরবর্তী এই এলাকায় প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ হলেও এবার চারার অভাবে তা মাত্র ১২শ’ থেকে দেড় হাজার বিঘায় নেমে আনতে বাধ্য হচ্ছেন এখানকার চাষীরা। এর ফলে আলুচাষের জন্য তৈরি করা জমির কিছু অংশে সরিষা বা গোলআলু চাষ করা গেলেও অধিকাংশ জমিই পতিত অবস্থায় থাকবে বলে আশংকা করছেন তারা।

বালুয়া গ্রামের মিষ্টি আলুচাষী খায়রুল আলম রাজা জানিয়েছেন, আগে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারহাট থেকে তারা প্রয়োজনীয় চারালতা সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করতেন। কিন্তু তিন-চার বছর থেকে আলুর চাহিদা বাড়ায় চারালতার চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। এ কারণে এখানকার চাষীরা বাইরের বীজের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে স্থানীয়ভাবে চারা উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। স্থানীয় হিসেবে আগে প্রতি বিঘার জন্য ১২ বোঝা (বান্ডিল) চারালতা এক থেকে দেড় হাজার টাকায় কেনা যেত। কিন্তু এ বছর বন্যায় এই এলাকায় প্রায় সম্পূর্ণ চারাবীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বগুড়ার বিহারহাট সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বোঝা চারালতা পাঁচ থেকে ৬শ’ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। এতে তাদের বিঘাপ্রতি চারালতার খরচ দাঁড়াচ্ছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। তারপরও প্রয়োজনীয় চারালতা না মেলায় এবার পঁচাত্তর শতাংশ জমিই মিষ্টিআলু চাষের বাইরে থাকছে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন আলুচারা রোপণ মৌসুমের শেষ প্রান্তে কয়েকগুণ বেশি দামে চারালতা সংগ্রহ করে আলুচাষে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন এ এলাকার চাষীরা।

এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে এখানকার আলু বাণিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়ে থাকে। সাড়ে চারশ’ থেকে সাড়ে ছয়শ’ টাকা হিসেবে প্রতি মণ আলু জমি থেকেই কিনে নেন বেপারীরা। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত একনাগারে চলে মিষ্টিআলুর উত্তোলন ও বিক্রির মৌসুম। এ সময় প্রতিদিন গড়ে বালুয়া ও বিশপুকুর পয়েন্ট থেকে ট্রাক বোঝাই করে এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ মিষ্টিআলু ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। এর সাথে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট অনেকেই ইতোমধ্যে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে ফেলেছেন। এ বছর তাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কৃষি কর্মকর্তা মো: খালেদুর রহমান চলতি বছরের পঞ্চম দফা বন্যায় মিষ্টিআলুর চারার ব্যাপক ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, কন্দল ফসল উন্নয়ণ প্রকল্পের আওতায় উন্নত জাতের মিষ্টিআলুর চারাসহ আনুসঙ্গিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান। বগুড়ার কন্দল ফসল গবেষনা কেন্দ্র থেকে যথাসাধ্য চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় আগামীতে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের মিষ্টি আলু চাষের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে চাষীরা এই আলু চাষে কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোন সহায়তা পান না বলে অভিযোগ করেছেন। প্রয়োজনীয় সরকারী সহায়তা পেলে এই মিষ্টিআলুর চাষ আরও ব্যাপকভাবে করা সম্ভব। এতে অভাবী এই এলাকার আরও বহু কৃষিজীবি মানুষ এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।


Search News




©2020 Daily matrichaya. All rights reserved.
Design BY PopularHostBD