রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
হাফিজুর রহমান.টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি::
বোরা ধানের ভালো দাম পাওয়া, সরকারের পক্ষ থেকে সার, বীজ ও সেচ সুবিধা পাওয়ার কারণে এবার কৃষকরা আউশ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বোরো কাটার পরপরই অনেক কৃষক আউশ ধান রোপণ করেছেন। আউশ ধান আবাদে উৎপাদন খরচ কম। পানি সেচ দেয়ার দরকার হয় না। সেই সাথে কিটনাশক ও স্যার প্রয়োগ করতে হয় সীমিত। তাছাড়া এবার বোরো ধানের ভালো দাম পেয়ে আউশ ধান উৎপাদনের উৎসাহ উদ্দীপনা আরও বেড়ে গেছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে আউশ ধান আবাদে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন আউশ চাষীরা।
চলতি বছর মধুপুর উপজেলার প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ করা হয়েছে। আউশের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় আদর্শ পদ্ধতিতে শুকনা ও ভেজা স্থানে চাষীদের তৈরী বীজতলা বিশেষভাবে লক্ষনীয় ছিলো বলে জানান স্থানীয়রা। ইতিমধ্যেই আউশ ধানের চারা রোপন সম্পূর্ণ হয়েছে।
গতকাল সোমবার সরজমিনে মধুপুর উপজেলা গোলাবাড়ী ইউনিয়নের সংগ্রাম শিমুল গ্রাম সহ অধিকাংশ এলাকাজুড়েই সবুজে ঘেরা বিস্তির্ণ আউশ ধানের ফসলের মাঠ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সম্প্রতি রোপণ করা আউশ ধানের ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছে আর অন্যদিকে গলা ছেড়ে গান গাইছেন কৃষকেরা। আনন্দ আর উল্লাস নিয়ে গান গাচ্ছেন আর আগাছা পরিষ্কার করছেন। দুপরের দিকেই কৃষকরে বাড়ী থেকে কৃষানী ভাত,ডাল, পাটের শাক, আর শুকনা ,মরিচ, পানির জগ, আর থালে ভরে নিয়ে গামছায় ঁেবধে আউশ ক্ষেতের মাঠে নিয়ে আসছে কৃষককে খাওয়ানোর জন্য। দুরের খাঁ খাঁ রোদ্রে ক্ষেতের আইলের আম গাছের নিচে বসে দক্ষিনা হওয়ায় গাঁ ছেড়ে দিয়ে ভাত খেয়ে নেন। পরে আবারো পূর্বের ন্যায় ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে শুরু করেন। পাশের ফাঁকা জমিতে কৃষকরা গরু,ছাগল চড়াচ্ছেন আর গান গাইছেন , কেউ বা করুণ সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন। আবার স্কুল পড়–য়া ছেলে মেয়েরা করোনা মহামারীতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা নাটাই হাতে নিয়ে আকাশে ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন। মনে হচ্ছে এ যের এক ছাত্র-বৃদ্ধ,কষক-কৃষাণীর মিলন মেলা বসেছে।
গোলাবাড়ী ইউনিয়নের সংগ্রাম শিমুল গ্রামের কৃষক অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য হাসেন আলী,ছানোয়ার হোসেন, আরশেদ আলী ও মোতালেব হোসেন জানায়, আগে আমরা বাপ দাদার আমলে আউশ ধানের আবাদ করতাম। মাঝ খানে আমাদের মধুপুর উপজেলার কৃষকরা আউশ ধানের আবাদ বাদ দিয়েছিলো। এখন আবার আমাদের এলাকার ধনবাড়ী-মধুপুর আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির প্রচেষ্টায় ও তার নির্দেশনায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমরা আউশ ধান আবাদ করি। কৃষি বিভাগ থেকে উন্নত জাতের আউশ ধানের বীজ, সার সহ কৃষি প্রণোদনা পেয়েছি। নিয়মিত কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তারা মাঠে এসে তদারকি করতেছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এবছর আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয় তাহলে বিঘা প্রতি ১৫ মন থেকে ১৭ মন ধান উৎপাদন করা যাবে। অন্যদিকে খড়ের ব্যবস্থা হবে। খড়েরও বাজার মূল্য অনেক বেশী তাই আশা করছি এছর আমরা আউশ ধান আবাদে লাভবান হতে পারব।
উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, আমার গোলাবাড়ী ইউনিয়ন বøকে আউশ ধানের বীজ, সার সহ সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি এবছর আউশ আবাদ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। আমরা কৃষি উপ-সহকারীগন মাঠে কৃষকের পাশে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি । পাশে আছি থাকব সব সময়।
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান তিনি জানান, আউশের আবাদ বৃদ্ধির জন্য সরকার মধুপুর উপজেলার ৮শ জন্য কৃষক কে বিন্যামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। ফলে কৃষকরা আউশ আবাদে উৎসাহিত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ছিল ১৫০ হেক্টর। অর্জিত ২৫০ হেক্টর জমিতে আউশ রোপন করা হয়েছে। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশী। এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর বেশী জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। ১১’শ ২৫ মেট্রিকট্রন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ মাননীয় কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক স্যারের নির্দেশনায় বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষিখাত কে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।