সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:১২ অপরাহ্ন
এম.এ মুঈদ হোসেন আরিফঃ ফরিদপুর সালথা উপজেলার সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বি নোমানের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীদের ভাতার কার্ড দিতে কালক্ষেপন ও যাচাই বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে সমাজসেবা অধিদফরের সামাজিক নিরাপত্তা অধিশাখা হতে ২১.০১.০০০০.৪৯.০২. ০০৮.২১. ৮১৭ নং স্মারক মূলে একটি চিঠি প্রদান করা হয়। যেখানে উল্লেখ আছে ২০২০-২০২১ অর্থবছর হতে দেশের অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা শতভাগ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং বর্ধিত প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও একই কার্যক্রম চালু আছে। উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিআইএস এর ৩০ জুন, ২০২১ তথ্য অনুযায়ী প্রণীত ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক বিভাজন প্রস্তুত করে বরাদ্দ অনুযায়ী অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচির বাস্তবায়ন নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্ত আবেদনপত্র ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখের মধ্যে যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রেরণের কথা বলা হয়েছে। নির্বাচিত ভুক্তভোগীদের ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রদত্ত ডাটা এন্ট্রির কাজ ৭ অক্টোবর, ২০২১ তারিখের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপকারভোগীর হিসাব খোলার কাজ সম্পন্ন করে ১৫ অক্টোবর ২০২১ ইং তারিখের মধ্যে ভাতা প্রদানের নিমিত্ত পে-রোল প্রেরণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও উক্ত নির্দেশনায় অতিরিক্ত ভাতাভোগীর ক্ষেত্রে আটঘর ইউনিয়নে ৪১ জন, বল্লভদী ইউনিয়নে ৩০ জন, ভাওয়াল ইউনিয়নে ৩৮ জন, গট্টি ইউনিয়নে ৩৮ জন, যুদুনন্দী ইউনিয়নে ২০ জন, মাঝারদিয়া ইউনিয়নে ১২ জন, রামকান্তপুর ইউনিয়নে ২৬ জন ও সোনাপুর ইউনিয়নে ২৪ জনকে ভাতা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। উক্ত নির্দেশনা অমান্য করে সালথা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমান তার মনগড়া সুবিধামত ২০২২ সালে এসে উক্ত প্রতিবন্ধী ভাতা যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। যাচাই বাছাইতেও দেখা গেছে নয়ছয়। তিনি প্রতি ইউনিয়নে কোনো ধরনের চিঠি না দিয়েই মৌখিক ভাবে তালিকা তৈরির নির্দেশনা প্রদান করেন। ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সচিবদের সাথে কথা বলে, তারা বলেন আসলে নির্দিষ্ট কতজন প্রতিবন্ধীদের কে যাচাই বাছাই করে ভাতার আওতায় আনা হবে আমরা কেউ জানিনা। এছাড়া জানা যায় কোনো কোনো ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারও উপস্থিত থেকে যাচাই বাছাইয়ের কাজ করেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের চিঠিতে কোন ইউনিয়নে কতজন প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে তা সুনিদিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমান আটঘর ইউনিয়নে ৪১ জনের বিপরীতে ২৪ জনকে, বল্লভদী ইউনিয়নে ৩০ জনের বিপরীতে ২৪ জনকেই, ভাওয়াল ইউনিয়নে ৩৮ জনের বিপরীতে ৩০ জন, গট্টি ইউনিয়নে ৩৮ জনের বিপরীতে ৩০ জনকে, যদুনন্দী ইউনিয়নে ২০ জনের বিপরীতে ১২ জনকে, রামকান্তপুর ইউনিয়নে ২৬ জনের বিপরীতে ২০ জনকে ও সোনাপুর ইউনিয়নে ২৪ জনের বিপরীতে ২০ জনকে যাচাই বাছাই করেছে। যাহা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এছাড়াও একটি স্থানে ৩ বছর কর্মরত থাকার কথা থাকলেও তিনি কিভাবে প্রায় ৬ বছর যাবৎ কর্মরত আছেন এ নিয়েও নানা রকম গুঞ্জন শোনা যায়। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমান জানান, আমাদের কাজটি দেরি হয়েছে। আমি সহ আমার পরিবার করোনায় আক্রন্ত ছিলাম এবং উপজেলায় ইউনিয়ন নির্বাচনে আমি রিটানিং কর্মকর্তা ছিলাম এজন্য আমার কাজ করেতে একটু দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ নুরুল হুদার সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি বলেন অভিযোগ প্রমানিত হলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রতিবন্ধী ভাতা যাচাই বাছাই কমিটির উপদেষ্টা মোছাঃ তাছলিমা আকতার বলেন, আমি নিজে উপস্থিত থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বাচাই-বাছাই কার্যক্রমে তদারকি করেছি ৩টি ইউনিয়নের। তখন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মৌখিকভাবে যে সংখ্যা বলেছিলেন সেই মোতাবেক মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যান আমাকে প্রতিবন্ধী ভাতা বরাদ্দের বিষয়ে অভিযোগ জানালে এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে বরাদ্দের বিপরীতে সঠিকভাবে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।