ঠাকরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকতার কিংবদন্তি প্রবীণ সাংবাদিক, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সিপিবি জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আখতার হোসেন রাজার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছেন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
সোমবার সকালে প্রথমে সিপিবি কার্যালয়ের সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, সহ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সদস্য কাফি রতন, ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব আলীসহ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
এরপর ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল মাঠে প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহা. সাদেক কুরাইশী, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানসহ অনেক।
জানাযা শেষে পীরগঞ্জ উপজেলার গ্রামের বাড়ি ভেলাতোর ভদ্রপাড়ায় গার্ড অব অনারের ২য় নামাজে জানাযা শেষে দাফনকার্য সম্পূন্ন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা রোববার (১৩ মার্চ) আনুমানিক সকাল সাড়ে ৭টায় নগরীর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন)।
কমরেড আখতার হোসেন রাজা ১৯৪৮ সালের ১১জুলাই পীরগঞ্জ উপজেলার ভেলাতোর ভদ্রপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি পিতা আইয়ুব আলী সরকার ও মাতা জরিনা খাতুনের অষ্টম সন্তান।
তিনি ১৯৬৪ সালে পীরগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মেট্রিক ও ১৯৬৬ সালে দিনাজপুর এস এন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুথানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।১৯৭১ সালে তিনি ভারতের মানিঘাটা ও তেজপুরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি- ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর ট্রেনিং গ্রহণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৭নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
সমাজে গুরুত্বপুর্ণ অবদানের জন্য তিনি ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব থেকে আজীবন সম্মাননা এবং ইএসডিও এর গুনীজন সম্মাননা লাভ করেন।
১৯৭২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। এরপর ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলে তিনি ঠাকুরগাঁও যুবসংসদের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শহরে প্রথম প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করার পাশাপাশি ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষিসেচ কাজে ওয়াপদার ৬ শতাধিক গভীর নলকূপ গ্রামীন ব্যাংকের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে তুমুল কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এছাড়াও বেগুনবাড়ি-নারগুন অঞ্চলের আখচাষীদের উপর চিনিকল কতৃপক্ষের নানান হয়রানী ও পুলিশী নিপীড়ণের বিরুদ্ধেও ব্যাপক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় লাভ করেন। তিনি ভূমিহীনদের খাসজমি দখলের লড়াইয়েও নেতৃত্ব দেন।
১৯৬৭ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন আখতার হোসেন রাজা। তিনি দৈনিক সংবাদ, দৈনিক উত্তরা, দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট, রেডিও টুডে, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রায় ৫০বছর সাংবাদিক হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করেন।