বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন
সুমন হোসাইন:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন জারীকৃত পচনশীল পণ্য অতিরিক্ত শুল্কায়ন আরোপের কারনে বেনাপোল স্থলবন্দরে অর্ধশতাধিক ট্রাক পচনশীল পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। আটকে পড়া পচনশীল পণ্যের মধ্যে রয়েছে আনার,আঙ্গুর,মাছ ও ফল। হঠাৎ করে কাস্টমসের আদেশ কার্ষকর করায় কারনে ব্যাপক লোকসান ও ক্ষতির সম্মুখনে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। পচনশীল পণ্যে শুল্কায়নে অতিরিক্ত লোড পরিহারের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়ে কাস্টমস হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেছে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২৮ই জুন) রাত ৯ টায় বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সামনে পচনশীল পণ্যে শুল্কায়নে অতিরিক্ত লোড পরিহারের দাবিতে বিক্ষোভ সহ আমদানি ও রফতানি বন্ধের হুমকি দেয় বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টাস এন্ড এক্সপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশন। বিক্ষোভকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, গত ২৩ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর পচনশীল পন্য শুল্কায়নের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা জারি করে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের এক সভায় আমদানিকৃত শুল্কায়ন সমতা বজায় রাখা এবং আমদানিকারদের সুষম সুবিধা নিশ্চিতকরণের কারণ দেখিয়ে আমদানি পর্যায়ে মাছ শুটকি, টমেটো, পান ও ফলের সঠিক পরিমাপ নির্ধারণে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাকের চাকার সংখ্যার ভিত্তিতে নুন্যতম ওজন প্রস্তাব ও সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়। বেনাপোল কাস্টম হাউস বৃহস্পতিবার থেকে এ আদেশ কার্যকর করে। এতে লোকশানের কবলে পড়ে পণ্য চালান খালাস না নেওয়ায় বন্দরে আটকা পড়ে অর্ধশতাধিক পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স রয়েল এন্টারপ্রাইজের রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, বেনাপোল কাস্টম হাউস এনবিআরের জারীকৃত নতুন আদেশের অনুচ্ছেদ ৪ কলাম মূল্যায়ন না করায় আমরা পণ্য চালান খালাস নিতে পারছিনা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি চলমান সমস্যা নিরাসন না হয় তবে আগামী শনিবার থেকে এপথে পচনশীল পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টাস এর্ন্ড এক্সপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, এনবিআরের জারীকৃত নতুন আদেশের অনুচ্ছেদ ৪ এ ০৬ চাকার নিচের ট্রাক/পিক আপ ভ্যানে কিংবা উল্লিখিত চাকাভিত্তিক ন্য‚নতম ওজনের চেয়ে কম ওজন ঘোষণায় কোন পণ্য আমদানি করা হলে সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউস/স্টেশনে কর্মরত ডেপুটি কমিশনার/অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার এবং কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধি কর্তৃক ১০০% (শতভাগ) কায়িক পরীক্ষা করতে হবে এবং উক্ত পণ্যচালানসমূহ ন্য‚নতম জয়েন্ট কমিশনার পর্যায়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। আমরা এই আদেশের ভিত্তিতেও মাল খালাস নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষ এ আদেশ মানতে নারাজ। আমাদের আমদানিকৃত অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত না দিলে কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়তে হবে আমাদের।
আমদানিকারক গাজী এক্সিম এর মালিক শামিম গাজী জানান, এনবিআরের নতুন এ আইনে তাদের ট্রাক প্রতি ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। এতে আমদানিকারক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখে পড়বে তাছাড়া বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বিষয়টি এনবিআরকে পূণ্য বিবেচনা করে পূর্বের আইন বহাল রাখার অনুরোধ করছি।
আমদানিকারক উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, বন্দরে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক আটকে থাকা পণ্য চালানের বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আগামী রোববার সিদ্ধান্ত দিবে বলে জানিয়েছে। আগামী তিন দিন পচনশীল পণ্যের ট্রাক বন্দরে আটকে থাকলে তাদের পণ্য গরমে পঁচে যাবে। ফলে কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়বে ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা আলমগীর কবির জানান, কাস্টম কমিশনারের নির্দেশে এনবিআরের নতুন আদেশ তারা কার্যকর করছেন। কাঁচামাল আমদানিকারকরা অভিযোগ জানিয়ে পণ্য খালাস নিচ্ছেনা। তবে যারা পণ্য খালাস নেয়নি তাদের বিষয়ে রোববার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।