সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
জেলা প্রতিনিধি,নাটোর ঃ নাটোরের সদরে সরকারী খাল খননে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বরেন্দ্র বহুমূখী প্রকল্প অফিসের বিরুদ্ধে। সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার শশুরের বাড়ী বাঁচাতে সরকারের খরচ হলো ৮৮ লক্ষ টাকা। জানা যায় সেই বাড়িটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করে নির্মানাধীন।
ঘটনার বিবরণ ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় – নাটোর সদর উপজেলার ১ নং ছাতনী ইউনিয়নের সালেমপুর মৌজায় আমহাটি উচ্চ বিদ্যালয় হতে তেলকুপি গোদাই নদী পর্যন্ত ৪ কিঃ মিঃ যামিনী ভাদুরী খাল পূনঃখননের কাজ চলছে। তার মধ্যে গোদাই নদী হতে শিয়ালমারী বিল পর্যন্ত ২ কিঃমিঃ কাজ পেয়েছে মেসার্স পূর্নিমা এন্টারপ্রাইজ নওগাঁ আর অপর ২ কিঃ মিঃ কাজ পেয়েছে মমতা ফার্মেসী নওগাঁ। এর মধ্যে পূর্নিমা এন্টারপ্রাইজের কাজটুকু সঠিক নিয়মে হলেও অন্যের জমি দখল করে গায়ের জোড়ে খাল খনন সহ নানা অভিযোগ উঠেছে মমতা ফার্মেসীর ২ কিঃ মিঃ কাজের বিরুদ্ধে। খালের এ অংশে কাজ করছে আওয়ামীলীগ নেতা আঃ রহমান গাজী।বিষয়টি মমতা ফার্মেসীর কাছে জানতে চাইলে জানান রহমান গাজী আমাদের কাছ থেকে কাজটি মেন্ডেট করে নিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ রহমান গাজী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মূল নকশা অনুসরন না করেই খাল খনন করছেন। তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খালের উপর অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা তিনতলা ফাউন্ডেশনের বাড়ী বাচাঁতে খালের দিক পরিবর্তন করে অন্যের জমির উপর দিয়ে খাল খনন করছে। এ অংশে ২৪ ফিট চওড়া খাল খননের কথা থাকলেও বাড়ী বাচাঁতে মাত্র ১০ ফিট করে খাল খনন করছে। তেলকুপি গ্রামের আঃ কুদ্দুস বলেন সরকারী মূল নকশার জায়গায় বাধ দিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল পুকুর হিসেবে মাছ চাষ করছে।অভিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মুল নকশার বাইরে এসে আমার জমি দখল করে ১০/১২ ফিট রাস্তা সাদৃশ্য করে মাটি ফেলেছে তাতে করে আমার তিন শতক জমি তারা দখল করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে আঃ কুদ্দুসের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে আপনি কোন অভিযোগ করেন নাই কেন? তিনি বলেন আমি সহ এলাকার লোকজন স্বাক্ষর করে একটি দরখাস্ত গত ১৬/০৪/২৪ ইং তারিখে নাটোর পত্তর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জমা দেই যেন খালটি সার্ভেয়ার দ্বারা মেপে সঠিক নিয়মে হয়। কিন্তু আমি কোন প্রতিকার পাইনি। একই অভিযোগ করেন ঐ এলাকার তামিল হোসেন। তামিল হোসেনের অভিযোগ তার জমিও দখল করে নিয়েছে। এরকম অভিযোগ তুলেন একই এলাকার শফিকুল ইসলাম, কবির হোসেন, আব্দুর রশিদ সোনার,শুকুর মিয়াজী সহ অনেকে। শুকুর মিয়াজী বলেন মুল খাল ৩০৫ নং দাগে কিন্তু আমার দলিলি সম্পত্তি যার দলিল নং ১৫৪৭৮ দাগ নং ২৯৫ দখল করে রহমান গাজী তার আত্বিয়র বাড়ী বাচাঁতে খাল খনন করছে। এসময় শুকুর মিয়াজী ভেকুর সামনে শুয়ে প্রতিবাদ করে। যা কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়। তাছাড়া বিষয়টি সুরাহার জন্য গত ২৩/৫/২৪ তারিখে বরেন্দ্র অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী জনাব আহসানুল করিম বলেন এ বিষয়ে আমি অবগত নই এস ও মতিন সাহেব সব জানে। পরে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন গত ২৫/৬/২৪ তারিখে সহকারী কমিশনার(ভ’মি) অফিসের সার্ভেয়ার দ¦ারা জমি মেপে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা মতিন সাহেবের সাথে কথা বলুন। আহসানুল করিমের কথার সত্যতা যাচাই করতে নাটোর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের(ভূমি) কার্যালয়ে গেলে সহকারী কমিশনার জনাব কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন আমার সার্ভেয়ার সেখানে যায় নাই। পরে সাংবাদিকদের সামনে সার্ভেয়ারকে ডেকে প্রমাণ করে দেন যে তিনি সেখানে যায় নাই। পরে এস ও মতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদকদের সাথে খারাপ আচরন করে এবং ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব রফিকলি আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন খালের উপর অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি নকশা দেখে বলেন মূল খাল ৩০৫ নং দাগে। ২৯৪,২৯৫ নং দাগ খালের সম্পত্তি নয়।
পরে রহমান গাজীর কাছে জানতে চাইলে (বর্তমান ঠিকাদার) তিনি জানান আমি শিমুল ভায়ের কাছের লোক,অনেক ইয়ের বিনিময়ে কাজটি আমি নিয়েছি। প্রকল্পের বরাদ্দ জানতে চাইলে বলেন ৮২ লক্ষ টাকা। অথচ বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন কাজটি মোট ৮৮ লক্ষ টাকার। গড়মিল ৬ লক্ষ!
এসব অনিয়মের বিষয়ে কয়েকজন ভূক্তভোগীর লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে কম্বাইন্ড হিউম্যান রাইটস্ ওয়ার্ল্ড,নাটোর জেলা শাখার ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্দ টিম অধিকতর তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১০/৭/২৪ তারিখে নাটোর সিনিয়র জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হলে নাটোর সদর সিনিয়র জজ জনাব শারমিন আক্তার বিষয়টি আমলে নিয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ দেন। মামলা নম্বর ২৬৮/২৪ তারিখ ১০/৭/২৪ ইং।