সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
সুমন হোসাইন: বেনাপোল কাস্টমসে শুল্কায়ন গ্রুপ ৩ এর এনজিও কর্মী হোসেনের বিলাসবহুল রাজকীয় বাড়ি দেখে চক্ষু চড়কগাছ! এলাকাবাসীর। এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা গেছে, হোসেন বেনাপোল কাস্টমসে এনজিও কর্মী হিসাবে কাজ করে ৩নং গ্রুপে আর তার ছোট ভাই দেলোয়ার কাজ করে ৪নং গ্রুপে। অভিযোগ করে একাধিক সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি জানান,বহিরাগত এনজিও কর্মী হোসেন ও দেলোয়ার এই দুই সহোদরের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা। এনজিও কর্মী হোসেন ও দেলোয়ারের ৩ ও ৪ নং গ্রুপে ফাইল এসেসমেন্ট করতে গেলে আরও এবং এআরও স্যারদের ভুলভাল বুঝিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাদেরকে হয়রানি করছে। তাছাড়া কখনও আরও আবার কখনও এআরওদের নাম করে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে। দুই ভাইয়ের অত্যচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে দেশের ২য় বৃহত্তম গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল কাস্টম হাউসে কর্মরত অর্ধশতাধিক এনজিও কর্মী আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে শুধু মাত্র ঘুষের টাকা উত্তোলণের জন্য। যেখানে কাস্টমসে নেই তাদের কোন বেতন এবং বৈধ পরিচয়। সংশ্লিষ্ট শুল্ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা নিজের পকেট ভারী করতেই এনজিও কর্মী রেখেছেন। বহিরাগত এনজিও কর্মী দ্বারা গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করানোর মত গুরুতর অভিযোগে দুষ্ট কাস্টমকর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের পর বছর কর্মরত সেটেলমেন্ট খ্যাত এনজিও কর্মী হোসেন ও দেলোয়ার বনে গেছে কোটি কোটি টাকার মালিক। বেনাপোল দিঘীরপাড় এলাকায় হোসেনের ৩৩শতক জমির উপর বিশালবহুল বাড়ি,যশোর শহরে ফ্ল্যাট সহ নামে বেনামে কিনেছেন একাধিক জমি। দিঘীরপাড় এলাকায় ছোট ভাই ৪নং গ্রুপ এনজিও কর্মী দেলোয়ার শুরু করেছে নির্মানাধীন নতুন বাড়ির ২য় তলার কাজ। দুই ভাই মিলে অবৈধ সম্পত্তি করেছেন স্ত্রী এবং আত্মীয় স্বজনের নামে। যেখানে কাস্টমসে নেই তাদের কোন বেতন এবং বৈধ পরিচয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে,সংশ্লিষ্ট শুল্ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা নিজের পকেট ভারী করতেই এনজিও কর্মী দুই ভাই মিলে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী ঘুষ সিন্ডিকেট। কাস্টমসের শুল্ক বিভাগ সমূহে এই সিন্ডিকেট থাকায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী গ্রুপ ৩ ও ৪ এ অনৈতিক সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়ে বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আরও জানা গেছে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ার পর থেকে ঘুষ বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কর্মকর্তারা।
আমদানি কারক আজাদ জানান,বেনাপোল কাস্টম হাউসে বহিরাগত এনজিওরা ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটার রুপ ধারন করেছে। আমদানি কারকের একটি ফাইলে সুযোগ সুবিধা তারা ধার্য্য করছে। তাছাড়া ঘুষের টাকার উপর তারা নির্ধারণ করে কার ফাইল স্যার সই করবে আর কার ফাইল নিয়ে ঝামেলা করবে। এছাড়াও তারা গোপনে আমাদের ফাইলের নথি সম্পর্কে অন্য ব্যবসায়ীদেরকে জ্ঞাত করে অর্থ উপার্জন করছে। কমিশনার মহোদয় হাউসের ২য় তলায় বসেন এবং কাস্টম জুড়ে বিভিন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরাও রয়েছে। তিনি কি দেখেন না ? বহিরাগত এরা কারা ? গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হাতে নিয়ে তারা দপ্তরে দপ্তরে যাচ্ছেন। বর্তমান বেনাপোল কাস্টম হাউসে ৬৪জন সিপাই বিপুল পরিমান অফিস সহায়ক ও উচ্চমান সহকারী রয়েছে। সরকারী দপ্তরের কাজ সরকারী লোক দ্বারা করা হোক। এর আগে ২০২০ সালে বেনাপোল কাস্টম হাউসে ভল্ট ভেঙ্গে ১১ কোটি টাকার স্বর্ণ চুরি হয়। সন্দেহজনকভাবে কাস্টমসে কর্মরত ৪ জন এনজিও কর্মীকে আটক করে জেলহাজাতে প্রেরণ করে পুলিশ।
বেনাপোল কাস্টমসে নিয়োজিত শুল্কায়ণ গ্রুপ-০৩ এনজিও কর্মী হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ফাইল প্রতি ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, আমরা কিছুই না আরও এআরও স্যাররা যেটা বলে আমরা সেটা শুনি। এর বাইরে আমাদের কিছু করার থাকেনা। দেলোয়ার কি হয় জানতে চাইলে আমার ছোট ভাই বলে জানান।
ঘুষ ও হয়রানির বিষয়ে শুল্কায়ণ গ্রুপ-০৪ নিয়োজিত এনজিও কর্মী দেলোয়ারকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আমি ৪নং গ্রুপে দীর্ঘ বছরধরে কাজ করছি। স্যারেদের ফাইল প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা নিয়ে থাকি তবে ১৪ ও ১৫ হাজার টাকার কথা কোন সিঅ্যান্ডএফ বলেছে সে সিঅ্যান্ডএফ এর নাম বলেন। ৪নং গ্রুপে আপনার কাজ কি ? জানতে চাইলে সে বলে আপনি তো আগেই বলেছেন আমি একজন এনজিও কর্মী।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের উর্দ্ধতন অনেক নেতা জানিয়েছেন,কাস্টমসে কর্মরত বহিরাগত এনজিও কর্মীরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের হয়রানি সহ বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে যাচ্ছে। এ সকল বহিরাগত এনজিও কর্মীদের বেনাপোল কাস্টমস থেকে অপসারণ করলে কাজের গতি সহ রাজস্ব আদায় বহুল অংশে বৃদ্ধি পাবে। আমরা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাস্টমস হাউস থেকে অবৈধ এসব এনজিও কর্মী দ্রুত অপসারন করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এসব এনজিও কর্মীদের আটক করে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে তাদের সম্পদের পরিমান নগদ টাকা সহ জড়িত কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের অবৈধ আয়ের পরিমান।
এ বিষয়ে ৩নং গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল করিমের নিকট সাংবাদিক পরিচয়ে এনজিও হোসেন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি হ্যালো হ্যালো বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে পূনরায় কল করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এনজিও কর্মী দেলোয়ার সম্পর্কে ৪নং গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি ২নং গ্রুপের সুপার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে ৪নং গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলাম। এখন আর দায়িত্বে নেই নতুন রাজস্ব কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে।বহিরাগত দেলোয়ারের ঘুষ নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন এনজিও হিসাবে কাজ করে তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয় তিনি জানেননা।