বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

আপডেট
*** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***                     *** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***

বেনাপোল কাস্টমসের ছোঁয়ায় সম্পদের চূড়ায় এনজিও লিটন!

বেনাপোল কাস্টমসের ছোঁয়ায় সম্পদের চূড়ায় এনজিও লিটন!

আলাউদ্দিনের চেরাগ কান্ড এনজিও ‍লিটনের।

সুমন হোসাইন:
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ছোঁয়ায় সম্পদের চূড়ায় শুল্ক গোয়েন্দার এনজিও লিটন। আমদানি কারকের পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করলেই মনোনিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাছে ‘লিটনের মোবাইলে কল’ মনেই ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক। হয় কনসারমেন্টে শুল্ক গোয়েন্দার লক পড়বে না হয় দাবিকৃত টাকা দিতে হবে!। কাস্টমস্ হাউসের এনজিওর কাজ করে মাত্র কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে বহিরাগত এনজিও কর্মী লিটন। বেনাপোলে গুলশান এলাকা খ্যাত দুর্গাপুরে গড়ে তুলেছে আলিশান বাড়ি। যেখানে কাস্টমসে নেই কোন বেতন ও বৈধ পরিচয়। অভিযোগ রয়েছে লিটন নিজ গ্রাম ধান্যখোলা সহ বোয়ালিয়া,দুর্গাপুর,বেনাপোল,কাগজপুকুর ও যশোরে গড়ে তুলেছে সম্পাদের পাহাড়। কিনেছে বিলাশবহুল দামি গাড়ী। এছাড়াও ভাইদের নামে বেনামে কিনেছে একধিক জমি,মাছের ঘের স্ত্রী ও স্বজনের নামে ব্যাংকে এফডিআর সহ পোষ্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র। এ যেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। ‘অক্ষয়ভান্ডার এলাকাখ্যাত’ কাস্টম হাউসে সপ্তাহব্যাপী ঘুষ উত্তোলন সেবার ব্রত নিয়ে রোববার থেকে শুরু হয় সফর আর শেষ হয় বৃহস্পতিবার।

অনুসন্ধানে লিটন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাহমুদ হোসেন লিটন শার্শা উপজেলার ৪নং ধান্যখোলা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত মোসলেম আলী শেখের সেজো ছেলে। বেনাপোল কাস্টমসে শুল্ক গোয়েন্দার বহিরাগত এনজিও কর্মী লিটন আমদানি ফাইল প্রতি অনৈতিক সুবিধা দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ঘুষের টাকা উত্তোলন করে থাকে। শুল্ক গোয়েন্দা ফাইল লক ও পরীক্ষণ রিপোর্টে পণ্য বুঝে সেটেলমেন্ট খ্যাত এনজিও কর্মী লিটন কয়েক বছরে বনে গেছে কোটি কোটি টাকার মালিক। সংশ্লিষ্ট শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা নিজের পকেট ভারী করতেই লিটনকে রেখেছেন রফাদফা করার জন্য। বেনাপোল কাস্টমসে হয়রানির আরেক নাম শুল্ক গোয়েন্দা। ‘এনজিও কর্মী লিটনের অধিপত্যে অতিষ্ঠ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা’ বলতে গেলে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ফেলছেন। কোন কারন ছাড়াই ফাইল প্রতি দাবিকৃত অতিরিক্ত অর্থ না দিলে মেলেনা পরীক্ষণ রিপোর্ট। অসাধু গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনৈক দাবির ফলে এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ী। একাধিক সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা জানিয়েছেন শুল্ক গোয়ান্দার গ্রুপে রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তার নামে ফাইল প্রতি ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় সাধারন ফাইলে। আর বড় ধরনের রাজস্ব ফাঁকি দিতে পরীক্ষণে ওয়েট লোডে বিশেষ ছাড়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষ বাণিজ্যের মূল করিগর এনজিও লিটন। এছাড়াও মাসিক চুক্তিতে নামি দামি সিঅ্যান্ডএফদের শুল্ক গোয়েন্দার লক না করা শর্তে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে থাকে। এসব ঘুষ বানিজ্যের ফলে সাধারন আমদানি কারকদের প্রতিটি ফাইলের খরচ বেড়ে দিগুনে দাঁড়িয়েছে।

বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান,আমাদের গ্রামের মৃত মোসলেম আলী শেখ বর্গায় কৃষি জমি চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহ করতো। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোয় সন্তানদের লেখা পড়া করাতে পারেনি। তার ২য় পক্ষের স্ত্রীর ৪ ছেলের মধ্যে সেজো ছেলে লিটন বর্তমান কাস্টমে গোয়েন্দার চাকরী করে বলে শুনি। আর এই চাকুরী সুবাধে কয়েক বছররের ব্যবধানে হয়েছে অবাধ সম্পাদের মালিক। বর্তমান আমাদের গ্রামের আশপাশের মাঠে যেখানে জমি বিক্রির কথা শোনে সে জমি বেসি দাম দিয়ে কিনে নেই তার সন্তানেরা। এ যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ কান্ড।

ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের শার্শা উপজেলা কমিটির সভাপতি আক্তারুজ্জামান লিটু বলেন, বেনাপোল কাস্টমসে প্রবাহমান ঘুষধারা বজায় রাখতে বহিরাগত শতাধিক এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে কোন বিধিব্যবস্থা নেয় না কর্তৃপক্ষ। স্বয়ং ডেপুটি কমিশনার,যুগ্ন-কমিশনার নিজেদের দপ্তরে রেখেছেন বহিরাগত এনজিও কর্মী। সেখানে গ্রুপ বা অনান্য স্থানে কিভাবে তারা দুষ্ট চক্র দমন করবেন? আমি দুদক সহ প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য বাহিনীদ্বারা অভিযান পরিচালনা করে এসব বহিরাগত কর্মীদের আটক করে কস্টমস কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যে সহ অবৈধ আয়ের হিসাব নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় আমদানি কারক মুস্তাফিজুর রহমান জানান,শুল্ক গোয়েন্দার যত হয়রানী তত টাকা বানিজ্যে। আর এর ইজারা নিয়েছে এনজিও কর্মী লিটন। কাস্টম হাউসে কমিশনার মহোদয় ২য় তলায় বসেন এবং কাস্টম জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একাধিক সিসি ক্যামেরাও রয়েছে। তিনি কি দেখেন না ? বহিরাগত এরা কারা ? গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হাতে নিয়ে তারা দপ্তরে দপ্তরে যাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল কাস্টম হাউসে কর্মরত শতাধিক এনজিও কর্মী আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে শুধু মাত্র ঘুষের টাকা উত্তোলণের জন্য। বহিরাগত এনজিও কর্মীরা প্রতিটি গ্রæপের রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সহকারী কমিশনার,ডেপুটি কমিশনার,যুগ্ন কমিশনারদের ফাইল প্রতি ঘুষ আদায় করানোর মত গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত। বহিরাগত এনজিও কর্মীদের মোবাইল ট্যাগ করলে বেরিয়ে আসবে ঘুষ বাণিজ্যের স্বঘোষিত চিত্র। কাস্টম কমিশনারের যোগসাজ আছে বলেই এরা দেদারসে হাউসে কাজ করে যাচ্ছে। তা না হলে সংরক্ষিত সরকারি দপ্তরে এরা প্রবেশ করে কি ভাবে ?।

একাধিক সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তারা জানান,ভারত হতে পণ্য প্রবেশের পর আমদানি কারক যে সিঅ্যান্ডএফকে পণ্য খালাশের দায়িত্ব দেয় সে সকল সিঅ্যান্ডএফকে শুল্ক গোয়েন্দার বহিরাগত এনজিও কর্মী লিটন মোবাইলে কল দিয়ে গোয়েন্দার লক দেওয়া হবে বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে আগে ভাগে রফাদফা করে। লিটনকে টাকা দিলে ফাইলে আর লক পড়ে না। ফলে সিঅ্যান্ডএফরা দুর্ভোগ থেকে রেহাইপেতে নিরুপাই হয়ে এনজিও কর্মী লিটনের দাবিকৃত ঘুষ প্রদান করে থাকে। সে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের হয়রানি সহ বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে যাচ্ছে। এছাড়াও নামি দামি সিঅ্যান্ডএফদের শুল্ক গোয়েন্দার লক না করা শর্তে মাসিক চুক্তিতে টাকা উত্তোলন করে থাকে। হাউস থেকে লিটনের মত বহিরাগত এনজিও কর্মীদের অপসারণ করলে কাজের গতি বৃদ্ধি সহ রাজস্ব আদায় বহুল অংশে বৃদ্ধি পাবে। আমরা দেশের উন্নায়নের স্বার্থে কাস্টমস হাউস থেকে অবৈধ এসব এনজিও কর্মী দ্রুত অপসারন করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এসব এনজিও কর্মীদের আটক করে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে ওই সকল সিন্ডিকেট সদস্য ও কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের অবৈধ আয়ের পরিমান। এক একটি এনজিও কর্মীদের সম্পাদের হিসাব নিলে বোঝা যাবে কি পরিমাণ ঘুষ বাণিজ্যে হচ্ছে। বর্তমান কাস্টমসে কর্মরত এনজিও কর্মীদের বাড়ি,গাড়ি ও সম্পদের পাহাড় দেখে চক্ষুচড়ক অবস্থা এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা আকরাম হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বহিরাগত এনজিও দপ্তরে রাখার বিষয়ে কাস্টমস হাউসের দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


Search News




©2020 Daily matrichaya. All rights reserved.
Design BY PopularHostBD