বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
সুমন হোসাইন:
বেনাপোল বন্দরে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কোটি কোটি টাকার পণ্য পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পণ্যগারের বিভিন্ন শেডে পানি প্রবেশ করে বিশাল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানি কারকের প্রতিনিধি ও বন্দর ব্যবহারকারী একাধিক সংগঠন। পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়া এসব আমদানি করা পণ্যর মধ্য রয়েছে কাপড়ের রোল,সুতা,কাগজ,টেক্সটাইল ডাইস,বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কাঁচামাল।
সরেজমিনে রোববার (৪ আগষ্ট) সকালে বন্দরের বিভিন্ন শেড ঘুরে দেখা যায় মান্ধাতার আমলের জরাজীর্ণ শেড ও ইয়ার্ড দিয়েই চলছে বন্দরের কার্যক্রম। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব শেড়ে প্রবেশ করে বৃষ্টির পানি এমনকি শেডের ছাদ দিয়েও টপটপ করে পড়ছে পানি। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজব্যবস্থা থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে সেগুলো ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বন্দর এলাকার পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে বন্দর অভ্যন্তরে জমে কোটি কোটি টাকার পণ্য ভিজে নষ্ট হয়েছে। বেনাপোল বন্দরের জরাজীর্ণ ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেডে গিয়ে দেখা গেছে সামান্য বৃষ্টিতে প্রতিটি শেডের মধ্য বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে থই থই করছে। বন্দর শ্রমিকরা মগ,বালতি দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ নম্বর শেডের রক্ষিত পণ্য। দেখা যায় ৯ নম্বর শেডের ভেতরে প্রায় এক ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে শেডের মালামাল। প্রতিবছর বৃষ্টিতে বিপুল পরিমান পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্দর কতৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান একসাথে নতুন করে দেশের ১৫ থেকে ২০টি বন্দরে উন্নয়ন কাজ করছেন। পুরাতণ জরাজীর্ণ শেড নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে বন্দরের কার্যক্রম। কয়েকটি শেড সংস্কার ছাড়া গত ২০ বছরেও নতুন করে কোন শেড নির্মান করেনি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পুরাতন। অপার সম্ভাবনাময় সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে দীর্ঘ ২২ ধরে কাংঙ্খিক উন্নয়ন হয়নি। বৃষ্টিতে পণ্যগারে পণ্য ভিজে নষ্ট হলেও বিমা না থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ক্ষতিপূরণ দেন না।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, সুষ্ঠ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরে সমস্যার শেষ নেই। বন্দরের জায়গার অভাবে সময়মতো পণ্য লোড ও আনলোড করা যাচ্ছে না। এছাড়া বন্দরে ২২ বছরে দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়ার কারনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা। বন্দরে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্টান গুলোর চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগ বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার মিলছেনা। সামন্য বৃষ্টিতে বন্দরের শেডগুলোতে পানি প্রবেশ করে শত শত কোটি টাকার পণ্য ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ বন্দর কর্তৃপক্ষ বিরাট উদাসীনতা রয়েছে। প্রসঙ্গত বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক পদ প্রায় ১ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। বন্দরে যুগোপযোগী উন্নয়নে বন্দরটিতে দ্রুত পরিচালক নিয়োগের দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও কার্যত কোন ভূমিকা নেই। ফলে লোকসান ভোগ করতে হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের। বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশের ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ীর বাণিজ্যের চাহিদা থাকলেও যথাযথ উন্নয়ন নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের। পাশ্ববর্তী ভরতের পেট্রাপোল বন্দরকে ২০০৮ সালে স্থলবন্দর ঘোষণার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে সেখানে আগামী ২০০ বছরের পরিকল্পনা করে আধুনিক মানের অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে। সেখানে আমাদের বন্দর ২শত বছর পিছিয়ে পড়েছি। ব্যবসায়ীদের গুরুত্ববুঝে বন্দর আধুনিকায়ন করা জরুরী।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম জানান, ছুটির দিনে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় বন্দরের কয়েকটি শেডে পানি প্রবেশ করে পণ্য ভিজে গেছে। বন্দরের পাশে ছোট আঁচড়ার রেল লাইনের নিচে কালভার্ট বন্ধ রাখার ফলে বন্দরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমরা দ্রæত এস্কেভেটর দিয়ে মাটি সরিয়ে পানি নিস্কাশন করেছি। এছাড়া বন্দরে উন্নয়নকাজে ড্রেন সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছি শিঘ্রয় তা সমাধান হবে।