বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম ব্যুরো : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর অভিযানের মুখে কৌশল বদলাচ্ছে পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীরা। কৌশলে সাম্প্রতিক সংযোজন ইয়াবাসহ মাদকের চালান পরিবহনের গাড়ী চালকদের ব্যবহার। সম্প্রতি পণ্যবাহী পরিবহন সহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে বড় বড় মাদকের চালান ধরা পড়েছে।চট্টগ্রাম নগরীতে গড়ে প্রায় প্রতিদিনই ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজার থেকে আসা পণ্যবাহি ট্রাক সহ বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে পতিনিয়ত। নিয়মিত অভিযান চালিয়েও রোধ করার সম্ভব হচ্ছে না এদিকে বিবিসির গবেষনায় বলছে, দেশের জনসংখ্যার প্রতি এক হাজারের ইয়াবা সেবীর সংখ্যা ১০০। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে টেকনাফে ১টি ইয়াবা বড়ি ৫০-৭০ টাকা কেনা বেচা হয়। যা চট্টগ্রামে আসলে হয়ে দাড়ায় ২৫০-৩০০টাকা। লাভ অনেক বেশি হওয়ায় ওজন মেপে নয়,সংখ্যার পরিমাপের ভিত্তিতে ইয়াবা পরিবহনের ভাড়া ঠিক হয়। এক পিচ ইয়াবা চট্টগ্রামে আনতে নেওয়া হয় ৪ থেকে ৫টাকা। এই হিসাবে ১লাখ ইয়াবা বড়ি টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে আনতে নেওয়া হয় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। ইয়াবা পরিবহনের লেনদেন নগদে নেওয়া হয় না। মোবাইল ব্যাংকির এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন তথ্য মতে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা রহিঙ্গাদের একটি অংশ এই নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তারা উপার থেকে ইয়াবা এপাড়ে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিচ্ছে। কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অনেকে প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পন করলেও ইয়াবা সিন্ডিকেটের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অভিযোগ আছে ইয়াবার প্রসারে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে এক শ্রেনীর পুলিশ সদস্যদের যোগসাজোশ থাকায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চলতি বছর চট্টগ্রামে ৩ পুলিশ সদস্য এবং গত বছর ৭ পুলিশ সদস্যকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। কিছু অসৎ পুলিশ শাস্তির তোয়াক্কা না করেই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি ও ইয়াবা ভয়ানক প্রসার ঠেকাতে গত এক বছরে অন্তত ১শ ক্রশ ফায়ারের ঘটনা ঘটছে। তবে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত বেশীরভাগই আইনশঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। তবে এত কিছুর পরও মাদক সিন্ডিকেটের মুলে যেতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ দিকে মাদক ব্যবসায়ীরা বরাবরই বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে মাদকের বিস্তার ঘটাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় কক্সবাজার থেকে সারা দেশের ইয়াবা ব্যবসার নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্র করা হলেও চট্টগ্রামকে ব্যবহার করা হয় ল্যান্ডিং স্টেশন হিসাবে। ইয়াবার বড় বড় চালান গুলো। চট্টগ্রামে আনার পর তা বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে হাত বদল হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গা ডাকা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা আড়ালে থেকেই ইয়াবা ব্যবসার কল কাঠি নাড়ছে। এ দিকে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের দাবী সাড়াশি অভিযানের কারনে মাদক ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামে ইয়াবা ব্যবসা স্থবির করেছে। কারন হিসাবে তারা বলছেন বর্তমান কক্সবাজার কর্তৃক সিন্ডিকেট অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে চট্টগ্রামে। মাদক দ্রব্যের নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন কিছু দিন আগেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে উম্মুক্ত কাউন্টারের মাধ্যমে প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি হতো। এখন ছোট বড় অনেক পয়েন্ট বন্ধ। প্রকাশে বিক্রি বলতে গেলে নাই। তিনি বলেন নগরের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে। অনেকে মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় বর্তমানে মাদক মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান সাড়াশি অভিযানের ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। পরিবহন চালকদের জড়িত করে মাদক চালান আনা নেওয়া এখন নতুন একটি কৌশল।