রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ অপরাহ্ন
নুর হোসেন লিটন : নোয়াখালী প্রতিনিধি
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী-বেগমগঞ্জের দোকানে দোকানে নামিদামি কোম্পানির সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ গ্যাস। বিভিন্ন কোম্পানির বোতল গুলোতে অনুমোদন বিহীন কারখানা থেকে রিফিল করা হচ্ছে এসব গ্যাস। পরে সেসব বোতল জেলার বিভিন্ন উপজেলার দোকানে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে মারাত্বক ঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। মানহীন ভাবে রিফিল করা এসব সিলিন্ডারে যে কোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অবৈধ ভাবে রিফিল করা এসব সিলিন্ডার যেন একেকটি গ্যাস বোমা।
তথ্য বলছে, বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ভূইয়া বাড়ির এক ভাড়া বাসায় তৈরী করা হয়েছে এই কারখানা। যেটির তত্বাবধায়নে রয়েছেন মোঃ ফয়েজ নামের এক যুবক। যিনি ফেনী এবং চট্টগ্রাম জেলা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস পূর্ণ সিলিন্ডার ভাঙ্গাড়ী লোহার দোকান থেকে কিনে আনেন। পরে সেই মেয়াদোত্তীর্ণ বোতল থেকে গ্যাস বিভিন্ন দোকানের খালি সিলিন্ডারে ভরে বাজারে বিক্রি করেন। গত এক বছর পূর্বে এই ফয়েজ চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনা এলাকায় মুরগি ব্যবসার আড়ালে পরিচালনা করতেন গ্যাস সিলিন্ডার রিফিলের ব্যবসা। পরে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অভিযানে সেই কারখানা বন্ধ করা হয়। চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনা থেকে এখন সেই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা খুলেছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ নরোত্তমপুর গ্রামের ভূইয়া বাড়িতে। রাত হলেই শুরু হয় ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস ভরার কাজ। অনুমোদন বিহীন এই কারখানাটি যেন একটি মৃত্যুকূপ। যেখানে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস পূর্ণ সিলিন্ডার থেকে বিভিন্ন বোতলে ভরা হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। পাশেই রয়েছে বিভিন্ন পরিবারের বসতঘর।
এক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী জানান, এখানে গ্যাস রিফিল হয়ে চলে যায় সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইসলামগঞ্জ বাজার, দিঘিরজান বাজার, সোনাইমুড়ী বাজার, আমিশাপাড়া বাজার, নদনা বাজার, নতুন বাজার, চৌমুহনির চৌরাস্তা, চন্দ্রগঞ্জ বাজার ও কেন্দ্রবাগ বাজারসহ ১৫-২০ টি বাজারে চলেযাচ্ছে এসব গ্যাস। বাসাবাড়ি, হোটেল, রেস্তোরা, পরিবহন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে গ্যাসের ব্যবহার। এই ধরনের নিম্ন মানের গ্যাস অত্যান্ত বিপদজনক। ইতিপূর্বে চৌমুহনী বাজারে বড় মসজিদ মার্কেট ও হকার্স মার্কেট, সোনাইমুড়ীর আমকি বাজারে ও উপজেলার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে প্রতিনিয়ত ঘটছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। এই ধরনের গ্যাস বিক্রিতে লাভ বেশি। তাই নামিদামি কোম্পানি থেকে গ্যাস না কিনে এই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বোতল রিফিল করে নেয় ব্যবসায়ীরা। যমুনা, বসুন্ধরা, টোটাল, পেট্রিগ্যাসের বোতল রিফিল করা হয় বলে জানান তিনি।
নরোত্তমপুর এলাকা স্থানীয় মুসল্লি ফজলুল হক জানান, ভূইয়া বাড়ির পাশের মসজিদের তিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন। সন্ধ্যার পর ওই বাসার পাশ থেকে গ্যাসের গন্ধে নামাজে যেতে কষ্ট হয়। কয়েকবার ফয়েজকে এই বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোন সমাধান হয়নি। এই নিম্নমানের গ্যাস অন্য বোতলে ভরার সময় যে কোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। পুরো এলাকাবাসী রয়েছে আতঙ্কে। স্থানীয় মাতবর ও প্রশাসনের লোকজন এসে এখান থেকে মাসোয়ারা নিয়ে থাকেন। তাই এলাকার লোকজন ভয়ে মুখ খোলেনা।
সোনইমুড়ীর উপজেলার যমুনা গ্যাসের ডিলার হাফিজুর রহমান জানান, এই ধরনের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। অবৈধ গ্যাস রিফিল একটি অপরাধ ও আইন বহির্ভূত কাজ। বড় বড় কম্পানির নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারনা করায় সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এর আগে বজরা এলাকায় যমুনা গ্যাসের বোতলে এমন অবৈধ চক্রের কারসাজি ধরাপড়ে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহাম্মদ ওবায়েদ উল্লাহ দৈনিক মাতৃছায়া কে বলেন, এই ধরনের অবৈধ গ্যাস রিফিল করা সম্পূর্ণ বেআইনি। অতি শিগ্রহী এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।