বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন
সুমন হোসাইনঃ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজস্ব আদায়কারী বেনাপোল কাস্টম হাউসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যার সার্ভার জটিলতা ও গেটপাশ জালিয়াতির কারসাজিতে পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাশের নামে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। বন্দরের গোপন তথ্য ও অনুসন্ধান মতে জানা গেছে কাস্টমসের সার্ভার জটিলতা দেখা দিলে অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যে রাতারাতি পচনশীল পণ্য এসেসমেন্ট শুল্ক পরিশোধ না করে বন্দর থেকে পণ্য খালাস নিয়ে চলে যায়। এ বন্দরে পচনশীল পণ্য ছাড়করনে সুবিধা নিতে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সুযোগ বুঝে শুল্ক ফাঁকিতে মেতেছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কারসাজিতে ধরা পড়লেও কাস্টম কর্তৃপক্ষের অদৃশ্য কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। ফলে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরন করতে পারছেনা এ বন্দর।
গত ৬ই মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভারত হতে বেনাপোল বন্দরের ৩১নং মাঠে আলেয়া এন্টারপ্রাইজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এর আমদানি কারক এস এম কর্পোরেশন দুই গাড়ি ফ্রোজেন মাছের ট্রাক প্রবেশ করে যার মেনিফেষ্ঠ নাম্বার সি-৩৯৭৭৪ ও সি-৩৯৫৭৬। প্রবেশকৃত দুই ট্রাক মাছের পরীক্ষণ শেষে কাস্টমসের সার্ভার সমস্যার করনে এসেসমেন্ট করতে পারেননি। কিন্তু এ্যাসেসমেন্ট না করেই উক্ত দুই ট্রাক মাছ বন্দর হতে রাত ১১টায় খালাশ করে নিয়ে যায় আলেয়া এন্টারপ্রাইজের নিয়োজিত কর্মকর্তারা। সরজমিনে সকালে ৩১ মাঠে গেলে পণ্যবাহি ট্রাক খুঁজে না পাওয়ায় বিষয়টি জানাজানি হলে ৭ই মে সকালে এ্যাসেসমেন্ট করা হয় যার এসেসমেন্ট নম্বর এ-৩৯৭৩৮ ট্যাক্স ৬,৫৬,৪৯২ টাকা এবং অপরটি এ-৩৯৭৩৫ ট্যাক্স ১৫,১৫,১৯৮ টাকা। ফলে রাতে বন্দর থেকে যে গাড়ি গেট পাশ করে বের হয়ে চলে যায় পরের দিন একই ভাবে পণ্য এসেসমেন্ট করে সেই গাড়ির গেট পাশ করা হয়। এ যেন জাপানের বুলেট ট্রেনকেও হার মানায়।
গোপন অনুসন্ধানে জানা গেছে,গত ৯ই মার্চ শুল্ক ফাঁকি দিতে মাছের ট্রাকে লুকায়িত প্রায় ১০ লক্ষ টাকার শাড়ি ও থ্রি পিছ আটক করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। যার আমদানিকারক ছিলো ঢাকার লাকি এন্টারপ্রাইজ আর এই কাজ করছিলো শান্তর ভাড়া করা লাইসেন্স সোনালী এজেন্সি লিমিটেড। এর আগেও শান্তর দ্বারা সোনালী এজেন্সি লিমিটেডের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি সহ অবৈধ পণ্য চালান ছাড় করানোর একাধিবার অভিযোগ রয়েছে। শান্ত সোনালী,আলেয়া ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্সের মালিককে বুঝিয়ে মোটা টাকা দিয়ে কাস্টমসে বিল অফ এন্টি দাখিল করে থাকে। তবে তার নজর থাকে পড়ে থাকা বেশিরভাগ মহিলা সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স মালিক বের করে তাদের সাথে লোভনীয় চুক্তি ও লাইসেন্স রিস্ক হিসাবে মোটা টাকায় রফদফা করে। এচাড়াও সে পড়ে থাকা বিভিন্ন লাইসেন্স দিয়ে ভোমরা ও বেনাপোলে বিলঅফএন্টি দাখিল করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে আলেয়া এন্টারপ্রাইজের ভাড়াকৃত মালিক শান্তকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমি সড়ক দুর্ঘটানায় অসুস্থ আছি অফিসের কোন কিছু জানি না। তবে এমন ঘটনা ঘঠেছে কিনা শুনে জানাবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেনাপোলের এক মাছ আমদানি কারক জানান, সার্ভার জটিলতা অথবা সময় বাঁচাতে আমরা মাঝে মাঝে একই দিনে প্রবেশকৃত এসেসমেন্ট করা গাড়ির চালান দিয়ে বন্দর হতে পরে আগত গাড়ির পণ্য খালাশ করে নিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে উর্দ্ধত্বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছি। পরের দিন এসেসমেন্ট করে ডিউটির টাকা জমা দিয়ে দেই। এসেসমেন্ট ছাড়া বন্দর হতে পণ্য খালাশের কোন নিয়ম আছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন এসেসমেন্ট ছাড়া পণ্য বের করার কোন সুযোগ নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ গেটপাশ কারসাজি করে অনেক সময় বন্দরে আগত নতুন গাড়িতে থাকা বেশি প্যাকেজ পণ্য ও অবৈধ পণ্য অনায়াশে খালাশ করে নিয়ে যাচ্ছে।
৩১ নং পরীক্ষণ গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আলেয়া এন্টারপ্রাইজের দুটি মাছের গাড়ি পরীক্ষণ করা হয়েছে তবে খালাশের বিষয়টি তিনি জানেন না।