বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন
গত (৭ নভেম্বর ২০, রোজ শনিবার) ৫ দফা দাবী জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সমমনা ১৩ দল।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ঈদ শব্দ উনার শাব্দিক অর্থ খুশি। আর আ’ইয়াদ হলো ঈদ শব্দ উনার বহুবচন। যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে খুশি প্রকাশ করাটা সকল খুশির চেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ সে কারনে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলো পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ। আজ মুসলমানদের মধ্যে যদি পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ উনার চেতনা ও জজবা থাকত তাহলে কোনো কাফির মুশরিক ব্যঙ্গচিত্র বা কটুক্তি করার সাহস পেতো না।
বক্তারা বলেন, পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ যথাযথভবে পালন করলে মুসলমানরা তাদের আত্মীয়-স্বজন, মাল-সম্পদ এমনকি নিজের জীবন থেকেও তাদের মহাসম্মানিত, মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি মুহব্বত করতে পারতো। উনার জন্য অকাতরে নিজেদের জান-মাল কুরবান করে দিতে পারতো। মুসলমানদের মধ্যে সেরকম ঈমানী চেতনা ও রূহানী শক্তি জাগরুক থাকলে কাফির মুশরিকরা ভয়ে তটস্থ থাকতো। ফলে কেউই ব্যাঙ্গচিত্র বা কটুক্তি করতে সাহস পেতোনা।
বক্তারা বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে মানহানীকর বক্তব্য, লেখা, প্রকাশনা, টিভি প্রোগ্রাম, রেডিও প্রোগ্রাম, ইন্টারনেটে স্ট্যাটাসসহ যে কোন বিষয় প্রচার, প্রকাশ ও প্রদানকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। বাল্যবিবাহ নিরোধ নামক কুফরী আইন প্রত্যাহার করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মানহানীকর সকল বিষয় নিষিদ্ধ করে এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি কার্যকরে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা ৫ দফা দাবী সমূহ তুলে ধরেন
১. যথাযথভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন এবং সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফের জজবা ধারণের মাধ্যমেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষী কাফির, মুশরিক ব্যাঙ্গচিত্রকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া সম্ভব। বাংলাদেশ সরকারকে তাই আন্তর্জাতিকভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
২. আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ দিবসকে আন্তর্জাতিক দিবস পালনের উদ্যোগ নিতে হবে। এই দিবসটিকে বিশ্বছুটির ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনে সর্বোচ্চ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।
৩. ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, সুইডেনসহ যেসব রাষ্ট্র ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশ সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ওআইসিকে সাথে নিয়ে সারা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ও তীব্র জনমত তৈরী করতে হবে। জাতিসংঘের উপর শক্ত চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে শক্ত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। ফ্রান্সের পন্য বয়কট করতে হবে।
৪. ফ্রান্সকে সমর্থনকারী রাষ্ট্র ভারত এদেশের এবং সারাবিশ্বের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম-পরম আঘাত দিয়েছে। ভারতে অহরহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননার ঘটনা হচ্ছে এবং মুসলমানদের প্রতি পৈশাচিক অত্যাচার চলছে। মুসলমানদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনে কুরবানী দিতে, গরুর গোশত খাওয়াতে অকল্পনীয় নিপীড়ণ করা হচ্ছে। ভারতের মুসলমান নিপীড়ণ ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারী-বেসরকারীভাবে তীব্র প্রতিবাদ ও সক্রিয় প্রতিরোধ করতে হবে। ভারতীয় পন্য বয়কট করতে হবে।
৫. ফ্রান্সের ঘটনার পক্ষে এবং সারাদেশে কটুক্তিকারী অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়াচ্ছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। আজ ৭ই নভেম্বর তারা যে কর্মসূচি নিয়েছে ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, প্রতারণামূলক এবং সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। এবং কটুক্তিকারী ও ব্যাঙ্গচিত্রকারীদের রক্ষার দুরভিসন্ধি। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাহসী উচ্চারণে হিন্দু মৌলবাদীদের আঁতে ঘা লেগেছে। দেশকে বাঁচাতে এদের গোপন তৎপরতার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে আরো সাহসী এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারকে অবিলম্বে উগ্র মৌলবাদী হিন্দু সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করতে হবে।
* সমাবেশে বক্তারা বলেন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম দিনকে খ্রিষ্টমাস ডে নাম দিয়ে বিশ্বের সব দেশে ছুটি দেয়া হয়। তাহলে যিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনারও নবী এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল; উনার জন্মদিন উপলক্ষে কেন বিশ্বব্যাপী ছুটি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবেনা? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী ছুটি দেয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। যেখানে বর্তমানে ভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই সারাবিশ্বের জন্য আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হয়েছে, একইভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিলে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ তথা ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফে আর্ন্তজাতিক ছুটি আদায় করা সম্ভব। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু বাংলাদেশের মুসলমানদের নয় বরং বিশ্ব মুসলমানগণের ধর্মীয় নেতা হিসেবেও গন্য হবেন।
* সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফ্রান্সে খণ্ডকালীন মুসলিম শাসনের টুকরা টুকরা স্মৃতিচিহ্ন এবং স্পেনে দীর্ঘ মুসলিম শাসনের প্রভাব এখনো ফরাসি সমাজে দৃশ্যমান। ফরাসি ভাষায় কমপক্ষে পাঁচ শ’ শব্দ এমন রয়েছে, যা আরবি ভাষা থেকে এসেছে। ফরাসি কবিতায়ও আরবি ছন্দরীতির প্রভাব রয়েছে। ফ্রান্সের এমন অসংখ্য সড়ক, পাড়া, গ্রাম ও শহরের নাম রয়েছে, যা আরবি ভাষা থেকে গৃহীত। এমনকি কিছু ফরাসি পোশাক ও খাবারের নাম রয়েছে, যা ফ্রান্সে মুসলিম শাসনের স্মৃতি বহন করে।
বিশেষত মুসলিমরা ফ্রান্সের কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন। দক্ষিণ ফ্রান্সের স্থাপত্যশৈলীতেও মুসলমান স্থাপত্যরীতির প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া মুসলিম স্পেনের জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলো ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সকেও আলোকিত করেছিল।
* সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফরাসি বিপ্লব ৯০ দিনও টিকতে পারত না যদি উত্তর আফ্রিকার মুসলিম শাসক মোহাম্মদ ঘেইস জাহাজ ভর্তি করে গম না পাঠাতেন। সে সময় দক্ষিণ ফ্রান্সে দুর্ভিক্ষ চলছিল। রাজতান্ত্রিক ইউরোপ যখন বিপ্লব ধ্বংসের জন্য লড়ছে, তখন একমাত্র মুসলিম দুনিয়াই ছিল ফ্রান্সের পক্ষে। ১৭৯৫ সালে বিপ্লবী কমিটি ইসলামের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তধর্মীয় চুক্তি আরবি থেকে ফরাসিতে অনুবাদ করার ঘোষণা দেয়।’
* সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৮৩০ সালে আলজেরিয়াসহ উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত বিরাট একটি অংশে ফ্রান্সের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক মুসলিম ফ্রান্সে শ্রমিক হিসেবে আসে এবং ফরাসি বাহিনীতে যোগ দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফরাসি বাহিনীতে মুসলমানের অংশগ্রহণ আরো বাড়ে। এ সময় ছয় লাখ মুসলিম সেনা ফ্রান্সের পক্ষে লড়াই করে প্রাণ বিসর্জন দেয়।
* সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফ্রান্সের ইতিহাসে মুসলমানদের এতো অবদান থাকার পরও তারা যেভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে- তা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরযোগ্য।
* সমাবেশে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে ফ্রান্সের শক্ত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। ফ্রান্সের পন্য বয়কট করতে হবে।
সমাবেশ ও মানববন্ধনে সমন্বয় করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী দগমওলামা লীগের সভাপতি- পীরজাদা, বর্ষীয়ান বিপ্লবী জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, (পীর সাহেব, টাঙ্গাইল)। বক্তব্য রাখেন- সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি- আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, দপ্তর সম্পাদক- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, লায়ন আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, সহ সভাপতি- মাওলানা মুহম্মদ শোয়েব আহমেদ গোপালগঞ্জী, সাংগঠনিক সম্পাদক- হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সবুর মিয়া (রানীপুরা) সহ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ মুজিবুর রহমান আল মাদানী, হাফেজ ক্বারী মুহম্মদ শাহ আলম ফরাজী, হাফেজ মুহম্মদ আব্দুল বারী, কারী মাওলানা মুহম্মদ আসাদুজ্জামান আল কাদেরী, আলহাজ মুহম্মদ খোরশেদ আলম রেজভী, কাজী অধ্যাপক মাওলানা মুহম্মদ নোমান চৌধুরী, হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আল আমীন, মাওলানা মুফতী মুহম্মদ আব্দুল গফুর, হাফিজ মাওলানা খালিদ হাসান, আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম সিদ্দীকি আল কুরাইশি, মুফতী মাওলানা ফেরদৌস আহমদ কুরাইশি কুয়াকাটা পীর সাহেব, মাওলানা মুহম্মদ ওমর ফারুক গোপালগঞ্জী, হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সোবাহান, মাওলানা মুহম্মদ আব্দুর রব, সা:সম্পাদক শ্রীনগর উপজেলা ওলামা লীগ, মাওলানা মুহম্মদ মাহবুব আলম, কাজী মাওলানা মুহম্মদুল্লাহ, মাওলানা মুহম্মদ মোকাম্মেল হুসাইন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ চেয়ারম্যান- আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার। মিছিল শেষে শহীদ বঙ্গবন্ধু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহের মাগফিরাত কামনা করে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হায়াতে তৈয়বার জন্য দোয়া মোনাজাত করেন- আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী।