সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৯ অপরাহ্ন
সুমন হোসাইন:
শার্শা পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষক বদিউজ্জামান খানের (বাবুু) সনদ জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বড় ধরনের তদবিরে সংশ্লিষ্টদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনৈতিকভাবে বিদ্যালয়ে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠেছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ নথী থেকে জানা গেছে, শার্শা পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষক মোঃ বদিউজ্জামান খান (বাবু) ২০১০ সালে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের সময় পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনার্সের ২য় শ্রেণির সার্টিফিকেট দাখিল করেন সেই সার্টিফিকেটটি ছিল আসলে জাল বা ভূয়া। বিভিন্ন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে বদিউজ্জামান খান (বাবু) সরকারি এম এম কলেজ, যশোর থেকে ২০০২ সালে অনার্স পরীক্ষায় ৩৮১ নম্বর পেয়ে ৩য় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। চাকুরীর চাহিদা মোতাবেক ২য় শ্রেণী পাবার আসায় তিনি আবারও ২০০৩ সালে ইমপুরুভমেন্ট পরিক্ষা দেন এবং রেজাল্ট ৩৮৩ নম্বর পান এবং টেবুলেশন সীটে নন-ইমপুরুভমেন্ট আসে। যার ফলাফল অনার্সে ৩য় শ্রেণিই থেকে যায়। এখন প্রশ্ন উঠছে তিনি কীভাবে নিয়োগ নেবার সময় ২য় শ্রেণীর সার্টিফিকেট দাখিল করেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ঘটনা জানাজনি হওয়ার পর তিনি এম এম কলেজ, জেলা শিক্ষা অফিসার,জাতীয় বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন মহলে তদবির মিশনে নামেন তা এখনও তদন্তধীন রয়েছে। এবং এ ঘটানায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সরকারি দফতরের পৃষ্টপোষকতা আছে বলে জানা গেছে।
একটি সূত্র জানায়,শার্শা পাইলট হাইস্কুল কর্তৃক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরে সনদ যাচাই করতে গেলে সেখানে দেখা যায় যে বদিউজ্জামান খান (বাবু) অনার্সের ২য় শ্রেনির যে সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন তা আসলে সঠিক নয়। সেখানে তার যে সার্টিফিকেট আছে সেটা নন-ইমপুরুভমেন্ট আছে। এবং তিনি ২য় শ্রেণির যে মার্কসিট প্রদান করেছেন তার সাথে ২০০৩ সালের আসল মার্কসিটের কোন মিল নেই। তিনি ৩টি বিষয়ের প্রতিটিতে ১০ মার্কস করে মোট ৩০ মার্কস বাড়িয়ে তার মার্কসিট এ অনার্স ১ম বর্ষে পার্ট-১ এ ৩৯ এর জায়গায় ৪৯ ও পার্ট-২ এ ৩৩ এর জায়গায় ৪৩ এবং অনার্স ২য় বর্ষে পার্ট-৩ এ ৩৮ এর জায়গায় ৪৮ করে একটা জাল মার্কসিট ও সার্টিফিকেট বানিয়ে চাকুরি নিয়েছিলেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টি সরকারি আওতায় এসেছে এবং ৩০ জন শিক্ষকের এডহক নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু জাল সার্টিফিকেটের জন্য বদিউজ্জামান খান (বাবুর) নিয়োগ আটকে আছে। বর্তমানে তার সার্টিফিকেট জালিয়াতির তদন্ত জেলা শিক্ষা অফিসে ঝুলছে। এবং বড় অংকের টাকার মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তার নিয়োগ করিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । তার সনদ যাচায়ের জন্য ২৭ অক্টোবর-২০২২ তারিখে মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা হয়ে উপ-পরিচালক খুলনা অঞ্চল, খুলনাকে তদন্তভার প্রদান করা হয় এবং সেখান থেকে জেলা শিক্ষ অফিস যশোরকে তদন্তের দায়িত্বভার দেয়া হয় যার স্বারক নং-৩৭,০২,৪১০০,০০১, ১৮,০০৫,১৭,১০৫০। বর্তমানে তিনি সেখানেও ক্ষমতা দেখিয়ে সেটা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। এছাড়াও এম এম কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তারের নিকট থেকে সনদ সক্রান্ত একটি প্রত্যায়ন পত্র নিতে গেলে তার সন্দেহ হলে তিনি প্রত্যায়ন পত্র না দিয়ে ২০/১১/২০২২ইং তারিখে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন দপ্তর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরে পাঠান যার স্মারক নং-পি/২০২২/১১৯০।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, শার্শা ১০ নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার আপন দুলাভাই বিধায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জিম্মী করে রেখেছেন এবং পূনারায় জালিয়াতি করে আর একটি জাল সংশোধিত রেজাল্টের বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে এলাকায় নিজের বিষয়ে সমার্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। তার এই জাল সার্টিফিকেটে চাকরি করার ব্যাপারটা বর্তমানে শার্শা উপজেলায় টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে। যার ফলে এলাকায় শিক্ষকের এই ঘটনা সাধারন মানুষের ঘৃনা চরমে উঠেছে। এলাকার বিভিন্ন স্কুল,কলেজের শিক্ষক,অভিভাবক সহ সচেতন মহল এই জাল জালিয়াতির সুষ্ঠ বিচার দাবী করছে।