বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১০ অপরাহ্ন
নিষিদ্ধ সাব্বির রহমানকে নিউ জিল্যান্ড সফরের দলে দেখেও তালিকা অনুমোদন দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। কারণ, তাকে বলা হয়েছিল জানুয়ারিতেই শেষ হচ্ছে সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞা! কে তাকে এই ভুল তথ্য দিয়েছিল, তা অবশ্য মনে করতে পারছেন না বিসিবি সভাপতি।
নিউ জিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে দলে সাব্বিরের জায়গা পাওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে কদিন ধরেই। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পাওয়া সাব্বিরের ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা ছিল ফেব্রুয়ারিতে। নিউ জিল্যান্ডে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজের সময়ও তার নিষিদ্ধই থাকার কথা।
দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন জানান, অধিনায়ক জোরোলোভাবে দাবি করায় দলে নেওয়া হয়েছে সাব্বিরকে। পরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, দাবি জানানোর এখতিয়ারই তার নেই। তিনি কেবল ক্রিকেটীয় যুক্তি দেখিয়ে দলে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
তবে প্রধান নির্বাচক ও অধিনায়ক, দুজনই পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞা কমানোয় তাদের হাত নেই। প্রধান নির্বাচক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বোর্ড তাদের জানিয়েছে যে জানুয়ারিতেই সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞা কমানো নিয়ে তাই ধোঁয়াশা চলছিলই। সোমবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিপিএলের খেলা দেখতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বোর্ড সভাপতি। সেখানেই জানালেন ভুল জানার বিস্ময়কর তথ্য।
“যখন লিস্ট আমার কাছে সই করার জন্য আসে, সবার সই হওয়ার পর, তখন আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওর শাস্তির ব্যাপারটা। শাস্তি শেষ হচ্ছে কবে। আমাকে বলেছে, শাস্তি জানুয়ারিতে শেষ। হয়তো ভুল করে বলেছে। একটা হতে পারে, মেয়াদটা কমিয়ে দেওয়াতে শাস্তি কমে গেছে। আমি তখন আর বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করি নাই।”
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচকের গড়া দলের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয় সভাপতির কাছ থেকে। দল ঘোষণা হয়েছে গত বুধবার। বিসিবি সভাপতির অনুমোদন নেওয়া হতে পারে তার দু-একদিন আগে। মাত্র কয়েক দিন আগের ঘটনা। কিন্তু সাব্বিরের শাস্তি শেষের ভুল তথ্য কে দিয়েছিলেন, সেটি মনে করতে পারলেন না নাজমুল হাসান।
“আমার ঠিক মনে নেই (কে বলেছিল), ওখানে যারা নিয়ে এসেছিল…(তারাই বলেছে)। আমাকে বলা হয়েছিল শাস্তির মেয়াদ শেষ জানুয়ারিতে। আকরাম হতে পারে বা নান্নু, যারা সাধারণত দল নিয়ে আসে আমার কাছে। একটা হতে পারে যে ডিসিপ্লিনারি কমিটি হয়তো কমিয়েছে।”
বিসিবি সভাপতি জানালেন, দল গঠনে আগে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত থাকলেও গত কয়েক মাসে ততটা ছিলেন না। তবে সাব্বিরকে নেওয়ার পেছনে টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা তিনি অনুমান করার চেষ্টা করলেন।
“আসলে আগে আমি প্রতিটা জিনিসে যেভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম, বিশেষ করে দলের ব্যাপারে, স্কোয়াড নিয়ে, গত তিন মাস ধরে কিন্তু আমি একদম অফ। ইন্টারফেয়ার একদমই করছি না। সবশেষ মনে হয় এশিয়া কাপে ইমরুল, সৌম্যকে নিয়েছি ইন্টারফেয়ার করে। সাব্বিরের ব্যাপারটা আমার মনে হয়, ক্যাপ্টেন, কোচ ওরা হয়তো চেয়েছে। ওরা চাইছিল মূলত বিশ্বকাপের জন্য। ওরা বলছিল, যদি পারফর্ম করে, তাহলে বিশ্বকাপে ওর একটা সুযোগ আছে।”
“একটা হতে পারে, বিশ্বকাপের আগে সিরিজটা ওকে খেলাতে পারে, নাও পারে। দলের সঙ্গে নিয়ে গেল হয়তো ওর সেন্টিমেন্ট, মেন্টালিটি সব ঠিক করার জন্য। কন্ডিশনিংয়ের জন্য হতে পারে। তা না হলে নিষেধাজ্ঞা শেষের ১৫-২০ আগে ওকে নেওয়ার কারণই দেখি না। কারণ ১৫-২০ দিন পর এটা শেষই হয়ে যেত। পারফরম্যান্সও একটা বিষয়। একটা ম্যাচে ৮৫ করেছিল। সেটা দেখে হয়তো অনেকে আরও উৎসাহিত হয়েছে। মনে করেছে ও পারফরম্যান্সে ফেরত আসছে। এটা হতে পারে।”
বিসিবি সভাপতি অবশ্য মনে করেন, আরও সময় নিয়ে ফিরলেই সাব্বিরের জন্য ভালো হতো। আরেকটি ভুল যে তার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে পারে, আগেও একবার দেওয়া সেই হুঁশিয়ারি সাব্বিরকে আবারও জানিয়ে দিলেন নাজমুল হাসান।
“আসলে হয় কি, এখানে দুই-একটা ব্যাপার আছে। ওকে যখন বাদ দেওয়া হয়, এরপর অনেকবারই কিন্তু অনুরোধ এসেছিল ওকে নেওয়ার জন্য। আমরা সাধারণত এমনটা নিতে চাইনা বা নেইনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে হয় কি, এর আগেও দেখেছেন, অনেকেই মনে করে ও আসলে বদলে গেছে। এটা বিশ্বাস করতে থাকলে, তাহলে অনুরোধও বাড়তে থাকে।”
“এটা অবশ্যই ওর জন্য শেষ সুযোগ। ১৫-২০ দিন কমানো তো বড় কথা নয়, এরপরেও যদি আবার করে, জীবনও আর খেলতে পারবে না। আমি মনে করি আরও বেশি সময় নিয়ে, আরও বুঝে শুনে আসলে ওর জন্য ভালো হতো। এখন ওর জন্য ঝুঁকি অনেক বেশি। একটা ছোট্ট ভুলেও ওর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।”