শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৫ অপরাহ্ন

আপডেট
*** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***                     *** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***

বাংলাদেশ যেন আর হায়েনাদের হাতে না পড়ে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ যেন আর হায়েনাদের হাতে না পড়ে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তিনি শুধু তার বাবা মাকে হারিয়েছেন- তা নয়। বাংলাদেশের মানুষ সেদিন হারিয়েছিল তাদের উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা।

“জীবনকে মর্যাদাপূর্ণ করার সব সম্ভাবনা তারা হারিয়ে ফেলেছিল। আজকে আমরা তা পুনরায় ফেরত আনতে পেরেছি। এখান থেকে যেন আর বাংলাদেশ কখনো আর হায়েনাদের হাতে না পড়ে এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।

সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পঁচাত্তরে ওই ঘটনার পর সব থেকে দুর্ভাগ্য হল, আমাদের আওয়ামী লীগেরই খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়। আর জাতির পিতার লাশ পড়ে থাকে ৩২ নম্বরে। পরদিন আমার মার ও অন্যান্য সকলের লাশ বনানী কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়। আর আমার আব্বার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টুঙ্গিপাড়া। খুনীরা ভেবেছিল, তাকে দূরে নিয়ে রেখে দিলে আর কেউ পৌঁছাতে পারবে না।”

যিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন, তাকে এই দেশেরই কিছু মানুষ নির্মমভাবে হত্যা করেছে- এ বিষয়টা কখনোই বিশ্বাস করতে চাননি বলে জানান শেখ হাসিনা।

জাতির পিতাকে যারা সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারা যে ছিল পরিচিত মানুষই ছিল, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ডালিম (মেজর শরীফুল হক ডালিম), ডালিমের বউ, শালি, শ্বাশুড়ি সকাল থেকেই আমাদের বাড়িতে এসে বসে থাকত। মেজর নূর (এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী) সব সময় আসত। কে না আসত!

“কর্নেল ফারুক (সৈয়দ ফারুক রহমান), সেও আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু এদের ভেতর যে এই চক্রান্ত ছিল, এই যড়যন্ত্র ছিল, সেটা তিনি (বঙ্গবন্ধু) কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। এত বড় বেইমানি আর মুনাফেকি কোনো মানুষ করতে পারে … কিন্তু সেই কলঙ্কময় অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছিল এই বাংলাদেশে।”

শেখ হাসিনা বলেন, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ‘বেইমানি’ করে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু আড়াই মাসও টিকে থাকতে পারেননি।

“এই মোশতাকই জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেছিল। নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে তার সব থেকে বিশ্বস্ত মানুষ, যে মোশতাকের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, রশীদ, ফারুকের সাথে যে চক্রান্ত করেছিল, ওই হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছিল, সহযোগিতা করেছিল। পরবর্তীতে সে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে একদিকে সেনাপ্রধান ও অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়।”

বিএনপির যে নেতারা বলে আসছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় তাদের নেতা জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ মিথ্যা, তাদেরও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ইদানিং বিএনপি নেতারা নিজেদের সাফাই গাইতে একটা কথা বল শুরু করেছে, পঁচাত্তরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাই হয়নি। তারা জাতির পিতাকে খুন করল কীভাবে?

“কিন্তু বিএনপির যেই প্রতিষ্ঠাতা, সে নিজেই যখন খুনি, শুধু খুনি না, খুনের সঙ্গে তো জড়িত ছিলই, আবার এই খুনিদের বিচার যাতে না হয়, সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। তারই সময়ে এই খুনিদের পৃথিবীর বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।”

সে সময় জাতির পিতাকে হত্যার তদন্তে গঠিত কমিশনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে ভিসা না দেওয়ার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন।

“জাতির পিতার হত্যার বিচারের দাবিতে লন্ডনে একটি প্রতিবাদ সভা হয়। সেখানে একটা ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যিনি জাতির পিতাকে সমর্থন করতেন, স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসি, তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি ছিলেন… ওই কমিটির পক্ষ থেকে স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসিকে আমরা ঠিক করি, তিনি আসবেন তদন্ত করবার জন্য। ১৯৮০ সালে তিনি যখন ভিসা চাইলেন, জিয়াউর রহমান তখন রাষ্ট্রপতি। তাকে ভিসা দেওয়া হয়নি।”

শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, “জিয়া যদি খুনি না হয়, তার হাতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি যদি খুনিদের দল না হবে, তাহলে স্যার টমাস উইরিয়ামস কিউসিকে জিয়াউর রহমান কেন বাংলাদেশে আসতে দেয় নাই। তার দুর্বলতা কী ছিল?”

জিয়াউর রহমানের হাতেই এ দেশে ‘হত্যার রাজনীতি’ শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে তারা গুম, খুনের কথা বলে। এই দেশে গুম খুনের কালচার তো শুরু করেছিল জিয়াউর রহমান। আমাদের অগণিত নেতাকর্মীকে তারা তুলে নিয়ে গেছে। বহু নেতাকর্মীকে তারা অত্যাচার করেছে। তাদের পরিবার লাশটাও পায়নি।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা, হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। তার নেতৃত্বেই ১৯৯৬ সালে দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিন্তু সব সময় চরম দুঃসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটাকে ধরে রাখে। এই দল ধ্বংস করতে আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে, খালেদা জিয়া চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। এই দলের শেকড় বাংলার মাটি ও মানুষের সাথে প্রেথিত, তাই পারেনি।”

দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামিম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, মহানগর দক্ষিনের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।


Search News




©2020 Daily matrichaya. All rights reserved.
Design BY PopularHostBD