বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৯ অপরাহ্ন

আপডেট
*** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***                     *** সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698  ***              সিসি ক্যামেরা সিস্টেম নিতে যোগাযোগ করুন - 01312-556698 ***

বাংলাদেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’: এন্টিবায়োটিক দিয়ে রোগ সারছে না

বাংলাদেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’: এন্টিবায়োটিক দিয়ে রোগ সারছে না

মিসেস তাসমিন নাহার মিথুনের আট বছরের মেয়ে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার শিশু হাসপাতালে আছে। সাধারণ ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা নিয়ে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে মেয়েটিমাল্টিপল এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্টঅর্থাৎ তার শরীরের জীবাণু ধ্বংস করতে বেশ কয়েকধরণের ওষুধ এখন আর কাজ করবে না

এমন অবস্থায় চিকিৎসকরা তার মেয়ের জন্য কিছু ওষুধ দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও সেখানে দেখা যায় যে, শিশুটির শরীরে জীবাণু ধ্বংস করতে ওষুধটির যে শক্তিকে কাজ করার কথা ছিল, সেটা তেমনটা কাজ করছেনা। এখন তৃতীয় ধাপের ওষুধ ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে মিসেস মিথুনকে

মেয়ের পুরোপুরি সেরে ওঠা নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান তিনি, ইউরিন কালচারে ১৮টা এন্টিবায়োটিক দিয়ে টেস্ট করা হয় এর মধ্যে ১১টাই রেজিস্টেন্ট আসে। যেগুলো রেজিস্টেন্ট নয়, সেগুলোর মধ্যে একটা ঠিকমতো কাজ করছে না। আমি ভাবতেও পারিনি, আমার মেয়ের এমন অবস্থা হবে

সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতালে এক নবজাতকের মেডিকেল পরীক্ষাতেও দেখা যায় যে শিশুটি প্রায় ১৮টি এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট। থেকে ধারণা করা যায় যে, এই এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স বাংলাদেশের জন্য এখন নতুন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স কি?
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এন্টিবায়োটিক হচ্ছে সেই সব ঔষধযা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী ধ্বংস করে। এখন এই ওষুধ যদি সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করা না হয়তাহলে এক পর্যায়ে ওই জীবাণু সেই ওষুধের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। ফলে সেই ওষুধে আর কোন কাজ হয়না

একেই বলেএন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স‘ – অর্থাৎ যখন ব্যাকটেরিয়ার ধ্বংস করার ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক এর কার্যকারিতা থাকে না

শিশুরা কেন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট হয়?

আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মনিরুল আলম জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি আসা রোগীদের একটি বড় অংশের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা যায়।তিনি বলেন, আমরা এরকম শিশুদের পরীক্ষা করেছি, যারা আমাদের কাছে আসার তিন মাস আগেও কোন এন্টিবায়োটিক খায়নি। অথচ তাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়াগুলো মাল্টিপল ড্রাগ রেজিস্টেন্স। এর মানে শিশু এন্টিবায়োটিক না খেলেও প্রকৃতিপরিবেশের কারণে তাদের শরীরে ওষুধ কাজ করছে না। অর্থাৎ আমরা কেউই এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স নই। শিশুরা তো নয়ই

বর্তমান পরিস্থিতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় ধরণের অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ: সায়েদুর রহমান

তিনি জানান, বিশ্বে যে হারে নতুন এন্টিবায়োটিক তৈরি করা হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হারে বাড়ছে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স। যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে সামান্য হাঁচিকাশিজ্বরেও মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন . সায়েদুর রহমান

একটা এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে লাগে ১৫ বছর, ওটার বিপরীতে ব্যাকটেরিয়া রেজিস্টেন্স হতে লাগে এক বছর। আগামী সাত বছরে দুইবার বেশি এন্টিবায়োটিক আসার সম্ভাবনা নেই। এক সময় দেখা যাবে, রোগের জীবাণুকে কোন ওষুধ দিয়েই ধ্বংস করা যাচ্ছেনা।

পরিবেশে এই রেজিস্টেন্স কিভাবে তৈরি হয়?
শিশুদের এমন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হওয়ার পেছনে জেনেটিক বা বংশগত কোন কারণ না থাকতে পারে। তবে আমরা যেসব প্রাণীর মাংস বা শাকসবজি খাইসেইসব প্রাণীর শরীরে বা সবজির উৎপাদনে যদি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো রেজিস্টেন্স তৈরি করে, যার প্রভাব মানুষের ওপর পড়ে

ডা. রহমান জানান, “মানুষের প্রোটিনের জন্য যেহেতু, মাছ, মুরগি, গরু দরকার এবং সেগুলোকে সস্তায় বাঁচানোর জন্য এন্টিবায়োটিক দরকার। অর্থাৎ মানুষকে তার প্রোটিনের জন্যে ভবিষ্যতকে ঝুঁকিগ্রস্ত করা হচ্ছে।

এছাড়া হাসপাতাল থেকে শুরু করে রেজিস্টেন্ট ব্যক্তির হাঁচিকাশি মলমূত্র থেকেও তা ছড়াতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন

করণীয় কি?
চারটি প্রাথমিক সচেতনতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে বলে জানান . সায়েদুর রহমান। প্রথমত, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক কেনা/বিক্রি বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সকল এন্টিবায়োটিক ওষুধের প্যাকেটের রং লাল করতে হবে। এবং অন্যান্য ওষুধ থেকে আলাদা রাখতে হবে, যেন মানুষ সহজেই পার্থক্য করতে পারে

তৃতীয়ত, এন্টিবায়োটিকের ডোজ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না, ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে এবং নিয়ম মেনে খেতে হবে। চতুর্থত, জ্বর, সর্দি, কাশি ডায়রিয়া এই চারটি রোগ সারাতে এন্টিবায়োটিকের কোন প্রয়োজন নেই। তাই চিকিৎসককে এই চারটি কন্ডিশনে এন্টিবায়োটিক দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে

সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, ওষুধ সেবন করার বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান তার প্রয়োগের মাধ্যমে এই ভয়াবহ অভিশাপ ঠেকানো সম্ভব


Search News




©2020 Daily matrichaya. All rights reserved.
Design BY PopularHostBD