শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
সুমন হোসাইনঃ বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকুল দীর্ঘ ২ বছর পর চাকরি হারালেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার কাকড়াজান গ্রামে। গত ২ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম সই করা আদেশে তার চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। খন্দকার মুকুল হোসেন বেনাপোল কাস্টম হাউসে কর্মরত ছিলেন। বেনাপোল থেকে যশোর বিমানবন্দর হয়ে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকাসহ তিনি আটক হয়। জানা যায়, মুকুল বেনাপোল কাস্টম হাউসে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট থেকে ঘুষের এই টাকা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। প্রমাণ থাকার পরও এই কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা টাকার উৎস অজানা হিসেবে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুতির মাধ্যমে তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আদেশে বলা হয়েছে, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকুল হোসেন ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর বেনাপোল কাস্টম হাউসে যোগ দেন। ২০২২ সালের ১৪ জুলাই তিনি বন্দরে ৩১ নম্বর শেডের ওয়েব্রিজ জিএল শাখায় কর্মরত ছিলেন। ২৬ জুলাই কর্মস্থল ত্যাগ করে ঢাকা যাওয়ার বিষয়ে মুকুল বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে কোনো লিখিত বা মৌখিক অনুমতি নেননি। স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, বেনাপোল ৩১নং কাঁচা মালের ওয়েব্রিজে স্কেল কারসাজির মাধ্যমে ওজন ফাঁকি দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে কাস্টসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাজিয়েছেন একের পর এক নাটক। ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে এসে আটক হয়েছেন সেই আটক নিয়েও হয়েছে নাটক। শেষে সাময়িক বরখাস্ত হলেন। তদন্ত কমিটি দিয়ে নাম মাত্র প্রতিবেদন দিয়েছে। যাতে টাকার উৎস অজানা রয়ে গেল। শেষে এই বিপুল পরিমাণ টাকাকে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কর্মকর্তা কর্মস্থল ত্যাগ করতে অনুমতি নেয়নি। শেষে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত টাকা বহন ও অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করায় বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই কর্মকর্তার ঘুষের টাকা বিষয়ে মামলা করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খন্দকার মুকুল হোসেন ব্যবসায়ী আর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট থেকে বিপুল টাকা ঘুষ নিয়েছেন। সেই টাকা বহন করে ঢাকায় নিয়ে আসছেন। কিন্তু ঘুষের এত টাকা বহনের শাস্তি মাত্র বাধ্যতামূলক অবসর! অবসর দেয়ার মাধ্যমে তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও বলা হয়, খন্দকার মুকুল হোসেন সরকারের দায়িত্বশীল কাজে নিয়োজিত থেকে এমন কার্যক্রম সরকারি কর্মচারি বিধিমালা অনুযায়ী ‘দুর্নীতি পরায়ন’ ও ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য। ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লিখিত জবাব দিতে মুকুলকে এনবিআর নোটিশ দেয়। মুকুল জবাব দেয় এবং ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২ নভেম্বর তার শুনানি নেন এনবিআরের প্রথম সচিব (বোর্ড প্রশাসন) ও তদন্ত কর্মকর্তা গাউছুল আজম (উপসচিব)। পরে তদন্ত কর্মকর্তা একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত প্রতিবেদন ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত দলিলাদি বিশ্লেষণ করে এনবিআর। এতে দেখা যায়, জ্ঞাত আয় বর্হিভূত ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এই কর্মকর্তার ব্যাগে পাওয়া যায়। তিনি অনুমতি না নিয়েই কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন বলে তদন্তে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হলো।
ব্যাগভর্তি ঘুষের ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকাসহ আটক খন্দকার মুকুল হোসেনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা করেছে দুদক। ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। ঘুষের টাকাসহ আটক হওয়ার ৭ মাস পর মামলাটি দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত মামলায় খন্দকার মুকুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, খন্দকার মুকুল হোসেন ২০১০ সালে ঢাকায় এনবিআরের ক্যাশিয়ার পদে যোগ দেন। ২০১৭ সালের তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে উত্তীর্ণ হন। ২০২০ সালের নভেম্বরে বেনাপোল কাস্টম হাউসে যোগ দেন। ঢাকায় চাকরির সুবাদে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এ সুযোগে বেনাপোল কাস্টম হাউসে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন করেছেন।